• বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ৮ ১৪৩১

  • || ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

শনি`র বিচিত্রতা বিস্ময়কর!

লালমনিরহাট বার্তা

প্রকাশিত: ৪ ডিসেম্বর ২০১৮  

আমাদের ব্রহ্মাণ্ড এক বিচিত্রময় জায়গা। প্রতিদিন কত নতুন নতুন জিনিস আমাদের সামনে আসছে। অসংখ্য গ্রহ উপগ্রহ নিয়ে এটি তৈরি। তবে এতগুলো গ্রহের মধ্যে হয়তো আমরা সবগুলো গ্রহ সম্পর্কে ভালোভাবে জানিও না। তবে আমাদের সৌরজগতের সব থেকে সুন্দর ও চমকপ্রদ গ্রহ কোনটি তা হয়ত সবারই জানার ইচ্ছে আছে। যদি কোনো জ্যোতিষবিদকে জিজ্ঞাসা করা হয় আমাদের সৌরজগতের সবচেয়ে আকর্ষণীয় গ্রহ কোনটি নিঃসন্দেহে তার উত্তর হবে শনি। অপরূপ এবং বিস্ময়কর বিশাল বলয় নিয়ে আমাদের সৌরজগতের ষষ্ঠ সদস্য শনি গ্রহ।

শনি গ্রহের প্রথম সন্ধান পান বিজ্ঞানী গ্যালিলিও ১৬১২ সালে। সূর্য থেকে সাড়ে নয় অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট বা ৮৮৬.১৫ মিলিয়ন মাইল দূরে শনির অবস্থান। এ দূরত্ব পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্বের প্রায় দ্বিগুণ। একটি সাধারন মানের টেলিস্কোপ দিয়ে পৃথিবী থেকে দেখতে পাওয়া যায়। শনির ব্যাপারে জ্যোতিষবিদদের আগ্রহের কোন কমতি নেই। প্রতিদিনই কিছু না কিছু চমকপ্রদ তথ্য দিয়ে শনি গ্রহ নিজেকে বিজ্ঞানীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছে।

এই গ্রহের ভর প্রায় একশটি পৃথিবীর ভরের সমান এবং এর ব্যাসার্ধ সাড়ে নয় গুণ বেশি। প্রায় ৭৪৯১৪ মাইল। বিজ্ঞানিদের মতে শনির চাঁদের সংখ্যা ৩৪টি, যার বেশিরভাগই গত ২৫ বছরে আবিষ্কার হয়েছে এবং বাকি ১৩টিকে চাঁদ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

শনি মূলত গ্যাসীয় পদার্থে তৈরি হওয়া একটি গ্যাস জায়েন্ট এবং দ্বিতীয় সর্ববৃহ গ্রহ। শনি গ্রহের নামকরণ করা হয় গ্রিক দেবতা স্যাটার্ন এর নামে। রোমানদের কাছে যিনি ক্রেনাস বা ক্রনাস নামে কৃষির দেবতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। গ্রীক পুরাণ মতে স্যাটার্ন ছিলেন দেবতা জুপিটারের পিতা। যে আবার নিজের ছেলের জুপিটার দ্বারা সিংহাসন হারান। বাংলা শনি নামটির উৎপত্তি অবশ্য হিন্দু পুরাণের শনি দেবতার নাম থেকে। অবস্থানগত কারণে শনি গ্রহ হতে দূরবর্তী গ্রহগুলোকে খালি চোখে দেখতে পাওয়া বড়ই দুষ্কর। সে হিসেবে শনি গ্রহ সবচাইতে দূরবর্তী গ্রহ যাকে আদিম মানুষ গ্রহ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।

খ্রিষ্ট ধর্ম অনুসারে যিশুর আগমনী বার্তা নিয়ে আকাশে উদিত হয়েছিল একটি নক্ষত্র। কথিত আছে সেই স্টার অফ বেথেলহেম আসলে শনি গ্রহ। কারণ প্রাচীন জ্যোতিষ রেকর্ড থেকে জানা যায় সেই সময়টিতে আলোড়ন সৃষ্টিকারী দুটি মহাজাগতিক ঘটনা মানুষ প্রত্যক্ষ করেছিল। যার একটি ছিল ক্রাপ্রিকন তারকা মন্ডলীর একটি সুপার নোভা অর্থাৎ তারার বিস্ফোরণ এবং অপরটি এই স্টার অফ বেথেলহেম এর উদয়।

পৃথিবী সাড়ে উনত্রিশ বছরে শনি গ্রহের এক বছর হয়। শনি গ্রহকে রাতের আকাশে খুবই ধীরগতিতে একের পর এক নক্ষত্রপুঞ্জের মাঝে ভ্রমণ করতে দেখা যায়। অপরদিকে বৃহস্পতির গতি শনির থেকে বেশি। সাধারণত ১৩৯ বছর পর শনি এবং বৃহস্পতি গ্রহ এমন অবস্থানে আসে যখন পৃথিবীতে থেকে দুইটি গ্রহের কনজংশন অর্থাৎ একটি গ্রহের সামনে দিয়ে আরেকটি গ্রহ চলে যাওয়া দেখতে পাওয়া যায়। বেথেলহেম স্টার এর ক্ষেত্রেও তেমনই কোন ঘটনা ঘটেছিল বলে ধারণা করা হয়। দুইটি গ্রহের একই সমান্তরালে ছলে আসার ফলে উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। যাকে মানুষ নতুন কোন তারা উদয় ভেবে ভুল করেছিল।

সব গ্যাস জায়েন্টের গ্রহেরই বলয় আছে বলে আমরা জানি। সাধারণত বলয় গুলি গ্রহ থেকে বেশ দূরে অবস্থান করে, কিন্তু শনির বলয় কিছুটা ব্যাতিক্রম। কারণ তুলনামূলকভাবে বলয়গুলো গ্রহের খুব কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে। গ্যালিলিও যখন শনিকে প্রথম দেখেছিলেন তখন তিনি কিছুটা আশ্চর্য হন। কারণ এর বলয় কৌণিক অবস্থানের জন্য একে শনির দুই পাশে হাতল এর মতো দেখাচ্ছিল। তিনি ভেবেছিলেন এগুলো হয়তো শনির উপগ্রহ। পরবর্তীকালে ডাচ জ্যোতির্বিদ ক্রিশ্চিয়ান হাই গ্যান্স আরো উন্নতমানের লেন্স দিয়ে আরো পরিষ্কারভাবে শনিকে পর্যবেক্ষণে সক্ষম হন। ১৬৫৫ সালের মার্চ মাসে তিনি সব থেকে বড় উপগ্রহ টাইটান আবিষ্কার করেন।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –