• বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ৮ ১৪৩১

  • || ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

ভিডিও গেমের আদ্যোপান্ত (পর্ব-৩)

লালমনিরহাট বার্তা

প্রকাশিত: ৪ ডিসেম্বর ২০১৮  

বিশ্বজুড়ে ভিডিও গেমের বর্তমান বাজারের মূল্য প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার। পরিসংখ্যানের তথ্য মতে, আমেরিকার প্রতি তিনটি পরিবারের অন্তত দুটিতে ভিডিও গেমে আসক্ত মানুষ পাওয়া যাবে। এটিই মূলত স্বাভাবিক। আগের দুই পর্বে একবিংশ শতাব্দীর শুরু পর্যন্ত ভিডিও গেমের দ্রুত বিবর্তনের যে চিত্র আমরা দেখেছি, সেটি আসলে আজকের দিনের ভিডিও গেমের এ ব্যাপক জনপ্রিয়তার প্রতি ইঙ্গিত দেয়।

ভিডিও গেম নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর একের পর এক অসাধারণ গেম নির্মাণের প্রতিযোগিতার উপর ভর করে একবিংশ শতাব্দীর এত বড় ভিডিও গেম ইন্ডাস্ট্রি তৈরি হয়েছে। কন্সোল থেকে ব্যক্তিগত কম্পিউটার, সেখান থেকে স্মার্টফোন-ভিডিও গেমের বিপ্লব বেড়েই চলছে দিন দিন। অথচ বিজ্ঞানীদের গবেষণা কাজে সহযোগিতার জন্য ভিডিও গেমের উদ্ভাবন হয়েছিলো!

কম্পিউটার টেকনোলজির উন্নতির পথ ধরে পঞ্চম প্রজন্মের ভিডিও গেম হিসেবে বাজার দখল করে ত্রিমাত্রিক গেমগুলো। ১৯৯৫ সালে উত্তর আমেরিকায় মুক্তি পায় গেমিং কোম্পানি সেগার তৈরি কন্সোল স্যাটার্ন সিস্টেম। এটি ছিলো ইতিহাসের সর্বপ্রথম ৩২ বিটের কন্সোল, যেখানে কার্ট্রিজের পরিবর্তে সিডির মাধ্যমে গেম প্লে করা যেতো। সে সময়ে মূলত গেমিং কন্সোলের প্রযুক্তি উন্নয়নে বড় কোম্পানিগুলোর মধ্যে চলছিলো তুমুল প্রতিযোগিতা। যে কারণে ঘোষিত মুক্তির তারিখের ৫মাস আগেই স্যাটার্ন সিস্টেমকে বাজারে ছেড়ে দেয় সেগা, সনির প্লেস্টেশনকে পেছনে ফেলার জন্য।

 

1.ভিডিও গেমের আদ্যোপান্ত (পর্ব-৩)

ভিডিও গেমের বাজারে সনির আচমকা অভ্যুত্থান হয় প্লেস্টেশন রিলিজ দেয়ার মাধ্যমেই। পাল্লা দেবার ক্ষেত্রে সনিও কম যায় নি, সেই যুগে সনির প্লেস্টেশনের দাম ছিলো সেগার স্যাটার্ন সিস্টেমের থেকে ১০০ ডলার কম! এই প্রতিযোগিতায় পরের পদক্ষেপটি নেয় নিন্টেন্ডো। বাজারে আনে ৬৪ বিটের কার্ট্রিজ নির্ভর গেমিং সিস্টেম, যার নাম নিন্টেন্ডো ৬৪।

সেগা এবং নিন্টেন্ডোর চেষ্টার কমতি ছিলো না মোটেও। পাল্লা দিয়ে থ্রিডি গেমের বাজারে নতুন সব গেম নিয়ে আসছিলো তারা একের পর এক। উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়, ভারচুয়া ফাইটার। যেটি স্যাটার্ন-এর প্ল্যাটফর্মের জন্য বানানো হয়েছিলো। একই রকম গেম বানানো হয় নিন্টেন্ডো ৬৪-এর জন্যও। যেটির নাম দেয়া হয় সুপার মারিও ৬৪। কিন্তু এ ক্ষেত্রে মানতেই হবে, এ প্রতিযোগিতায় সনি ওয়াজ সবচেয়ে সেরা! কারণ, সনির ভিত্তি ছিলো অনেক শক্ত এবং সেগা ও নিন্টেন্ডোর মত গেমিং ব্যবসায় তাদের একমাত্র অবলম্বন ছিলো না। এ ব্যাপারটি সনিকে গেমিং ব্যবসার দুনিয়ায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেয়।

ভিডিও গেমের দুনিয়ায় সনির আধিপত্য চলে বহু সময় ধরে। ২০০০ সালে রিলিজ পাওয়া প্লেস্টেশন ২ ছিলো এ যাবৎকালের সর্বাধিক বিক্রি হওয়া গেমিং কন্সোল। প্লেস্টেশন-২ ছিলো ডিভিডি পরিচালিত প্রথম গেম কন্সোল, যেটি বিক্রির প্রতিযোগিতায় হারিয়ে দেয় সেগার ড্রিমকাস্ট, নিন্টেন্ডোর গেমকিউব ও মাইক্রোসফটের এক্সবক্সকেও। উল্লেখ্য, অনেক গেমিং বিশেষজ্ঞদের মতে, সেগার ড্রিমকাস্ট ছিলো অতুলনীয় এবং তার সময়ের থেকে অনেকটা এগিয়ে। অনলাইন গেমিং-এর সুবিধা ড্রিমকাস্টকে দিয়েছিলো অন্য এক মাত্রা। কিন্তু বাজারের প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে ২০০১ সালে সেগা তাদের কন্সোলের ব্যবসা গুটিয়ে নেয়। তারপর একটি থার্ড পার্টি সফটওয়্যার কোম্পানি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

২০০৫ ও ২০০৬ সালে মাইক্রোসফটের এক্সবক্স ৩৬০, সনির প্লেস্টেশন ৩ এবং নিন্টেন্ডোর উই এর হাত ধরে আধুনিক হাই ডেফিনেশন গেমিং-এর যাত্রা শুরু হয়। প্লেস্টেশন ৩ ছিলো ব্লু-রে উপযোগী, তাই বাজারে ভালোই জায়গা করে নেয় এটি। কিন্তু প্রথমবারের মতো সনি বেশ ভালো প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয় সেবার।

এক্সবক্স ৩৬০ এর গ্রাফিক্স ক্ষমতাও ছিলো প্লেস্টেশন ৩ এর কাছাকাছি। উপরন্তু এক্সবক্সের অনলাইন গেমিং ইকোসিস্টেম ছিলো সর্বক্ষেত্রে প্রশংসনীয়। এজন্যই ২০০৭ সালে অন্যান্য প্ল্যাটফর্মগুলোর তুলনায় অনেক বেশি গেম ক্রিটিকস অ্যাওয়ার্ড জিতে নেয় এক্সবক্স। এক্সবক্স ৩৬০ এ আরো অন্তর্ভুক্ত ছিলো মাইক্রোসফট কাইনেক্ট প্ল্যাটফর্মট, যেটি ছিলো অসাধারণ এক মোশন ক্যাপচার সিস্টেম, যা গেম প্লেতে এনেছিলো ভিন্ন মাত্রা। তবে প্লেস্টেশন ও এক্সবক্সের তুলনায় আগে আসলেও নিন্টেন্ডোর উই তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি বাজারে। যদিও তাদের মোশন সেন্সিটিভ রিমোট গেমিংকে আগের থেকে আরো সক্রিয় করে তোলে। তারপরও বাজার বিবেচনায় উইকে ফ্লপই বলা যায়।

 

2.ভিডিও গেমের আদ্যোপান্ত (পর্ব-৩)

একবিংশ শতকের প্রথম দশকের শেষ দিকে এসে ভিডিও গেম ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকের মতো সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে। আইফোনের মত মোবাইল ডিভাইসেও ছড়ায় ভিডিও গেমের ব্যাপ্তি, যার কারণে অনেক সাধারণ মানুষও গেমিং-এ আসক্ত হয়। অ্যাংরি বার্ড গেমটির কথা তো সবারই জানা, এর মালিকানা প্রতিষ্ঠান 'রোভিও' শুধুমাত্র ২০১২ সালে গেমটি থেকে আয় করে ২০০ মিলিয়ন ডলার!

বর্তমান প্রজন্মকে ধরা হয় ভিডিও গেমের অষ্টম প্রজন্ম হিসেবে। যার সূচনা হয় ২০১২ সালে, যখন নিন্টেন্ডো তাদের উই ইউ, সনি তাদের প্লেস্টেশন ৪ ও মাইক্রোসফট ২০১৩ সালে এক্সবক্স ওয়ান রিলিজ দেয়। উই ইউ তে ছিলো টাচ স্ক্রীন রিমোট কন্ট্রোল, যেটি ব্যবহারকারীদের টিভি পর্দা ছাড়াও উই গেমগুলোকে খেলাত সুযোগ করে দিতো। তারপরও উই ইউ ব্যবসায়িক সফলতার মুখ দেখে নি, বন্ধ হয়ে যায় ২০১৭ সালে।

২০১৬ সালে সনি রিলিজ দেয় এক্সবক্স ৪ প্রো নামে ফোর কে ভিডিও গ্রাফিক্স সম্বলিত আরো শক্তিশালী একটি গেমিং কন্সোল। পরবর্তীতে একই ফিচার দিয়ে রিলিজ দেয়া হয় এক্সবক্স ওয়ান এক্সকেও। তবে যাই হোক, গেমিং এর এ দুই জায়ান্ট প্লেস্টেশন ও এক্সবক্স উভয়ই এখন কাজ করছে ভারচুয়াল রিয়েলিটি গেমিং-এর উন্নতি করে কিভাবে ব্যবহারকারীদের সবচেয়ে সেরা গেম প্লে উপহার দেয়া যায় তা নিয়ে।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –