• বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ৮ ১৪৩১

  • || ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

সূর্য ছুঁতে যাচ্ছে নাসার মহাকাশযান !

লালমনিরহাট বার্তা

প্রকাশিত: ৩ ডিসেম্বর ২০১৮  

সূর্য থেকে আলদা আলদা স্টেপ লেন্থে ক্ষতিকারক রেডিয়েশন বের হয় যা আমাদের সৌরমণ্ডলের গ্রহকে গরম করে আর এনার্জি প্রদান করে। কিন্তু আমরা সূর্য থেকে ১৫০ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে পৃথিবীতে একটি ঘন বায়ুমণ্ডলের নিচে থাকলেও এই সূর্যের কিরণ আমাদের স্কিন এবং চোখের ক্ষতি করতে পারে। সূর্যের এই কিরণের ডাটাকে সংগ্রহ করার জন্য নাসা একটি মহাকাশযানকে সূর্যের খুব কাছে পাঠানোর চেষ্টা করছে। এই মহাকাশযানটি সূর্যের এতটাই কাছে যাবে যে যেটা আজ পর্যন্ত কোন মহাকাশযান যেতে পারেনি।

নাসা আশা করছে, এই মহাকাশযানটি গলে যাওয়ার পূর্বে সব রকমের তথ্য সংগ্রহ করে নেবে। পার্কার সোলার প্রোব নামে এই মহাকাশযানটির নাম একজন মহান অ্যাস্ট্রোনোমার উলজান পার্কার এর নাম অনুসারে রাখা হয়। এটাকে এই বছরে মানে ২০১৮ তে লঞ্চ করা হয়। এই যানটি সূর্যের কাছে যাওয়ার জন্য বেশি সময় নেবে না। আর এই যানটির দূরত্ব সূর্য থেকে মাত্র ৬০ লাখ কিলোমিটার হবে। ভাবতে গেলে এই দুরুত্বকে অনেক বেশি মনে হলেও যানটি সূর্যের তাপমাত্রাকে পৃথিবীর তুলনায় ৫০০ গুন অধিক অনুভব করবে। এর মানে যানটি ১৩৭৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা মোকাবেলা করতে পারবে।

এর সঙ্গে এই মহাকাশযানটিকে হাই রেডিও এক্টিভিটিরও সম্মুখীন হতে হবে। এই মিশনটিতে এই মহাকাশযানটি সূর্যের পরিক্রমা করবে এবং একাধিকবার সূর্যের ডেঞ্জার জোন এর ভেতরে আসবে। আর অন্য যে কোন মহাকাশযানে তুলনায় সূর্যের ৭ গুন অধিক কাছে চলে আসবে। এরপর পূর্বে ১৯৭৬ সালে হিলিয়াস টুঁ নামের মহাকাশযান সূর্যের কাছে গিয়েছিল। তখন এই যানটির সূর্য থেকে দূরত্ব ৪৩০ লাখ কিলোমিটার ছিল। পার্কার সোলার প্রোব সূর্যের সবথেকে বাইরের অংশ যেটাকে করনা বলা হয় সেখানে যাবে। যার সম্পর্কে আমরা তেমন কিছুই জানিনা।

আশা করা হচ্ছে এই যানটি সূর্যের বাইরের পৃষ্ঠ ররহস্যকে উন্মোচন করবে। ১.৫ মিলিয়ন ডলার খরচে তৈরি করা এই যানটিকে ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই ফ্লোরিডাতে অবস্থিত নাসার কেনাডিয়ান স্পেস সেন্টার থেকে লঞ্চ করা হয়েছে। যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে তাহলে এই মহাকাশযান সাত বছরে সূর্যের চব্বিশবার পরিক্রমা করবে। এই যানটি বাইরের অংশ কার্বন কম্পজিট সিল লাগানো হয়েছে যেটা যানটিকে সূর্যের থেকে বের হওয়া থেকে ভয়ংকর কিরন থেকে রক্ষা করবে। এর মানে এই যানটিকে ১৩৭৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাতেও সুরক্ষা প্রদান করবে।

এই যানটির সাইজ একটি গাড়ির সমান। নাসার দাবি, যানটির ভেতরের উপকরন হাই টেম্পারেচার সহ্য করতে পারবে। আর যানটির ভেতরের টেম্পারেচার রুম টেম্পারেচার মতোই থাকবে। এই যানটির ভেতরে এমন সব উপকরণ আছে যা থেকে আমরা সূর্যের সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারব। এর সাথে সাথে সূর্যের চৌম্বক ক্ষেত্র, এলেক্ট্রিক ফিল্ড আর শোলার সিস্টেমকেও বুঝতে পারব। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন এই সবকিছু জানার পর আমরা সূর্যের মহত্বপূর্ণ কিছু রহস্য উদঘাটন করতে পারব। যেমন সোলার ওয়িন্ড এর গতি কি করে এত বৃদ্ধি পায়। আর সূর্যের বাইরের আবহাওয়া তাপমাত্রা সূর্যের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা থেকে এত বেশি হয় কেন।

নাসার ধারণা মোতাবেক সূর্যের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৫৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, অপরদিকে তার বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা ২০ লক্ষ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এই মিশনটি আমাদেরকে আমাদের এই বিশাল তারা সম্পর্কে অনেক তথ্য প্রদান করবে। যদি এই মহাকাশযান সূর্যের কাছে গিয়ে সব রকমের মেজারমেন্ট করতে পারে তাহলে আমরা এ সম্পর্কে অনেক কিছু জানবো।

বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এই মহাকাশযানটি সূর্যের এত কাছে গিয়ে গলে যাওয়ার পূর্বে আমরা এর থেকে প্রয়োজনীয় ডাটা অবশ্যই সংগ্রহ করতে পারবো। কিছু মানুষ মনে করতে পারেন যে সূর্যের কাছে যাওয়া সম্ভব নয় আর এই মহাকাশযানটি যেতেও পারবে না। তাই নাসা আমাদের বোকা বানাচ্ছে বা আমি আপনাদের ভুল ইনফরমেশন দিচ্ছি। কিন্তু আপনাদের জানিয়ে দেই এটি কোন ফেক নিউজ নয় আপনি চাইলে নাসার ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখতে পারেন।

এই মহাকাশযানটি সূর্যের চারপাশে পরিক্রমা করতে করতে ছুটে চলে যাবে আর একসময় সূর্যের অতিরিক্ত তাপমাত্রা সহ্য করতে পারবেনা আর তখন সেটি গলে যাবে কিন্তু তার পূর্বেই সেটি সব ইনফরমাশন পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিবে। এই যানটি যখন সূর্যের সব থেকে বেশি কাছে হবে তখন এই যানটির স্পিড হবে চার লক্ষ ত্রিশ হাজার কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় এর মানে এই যানটি প্রতি ১ সেকেন্ডে ১০১ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করবে। এই স্পিড এতটাই বেশি যে আমরা এই স্পিডে পৃথিবী থেকে চাঁদে মাত্র ৩০ মিনিটে যেতে পারবো। এমনটা বলা হচ্ছে এই মিশনে এই যানটির ভেতরে একটি মাইকো চিপ থাকবে যেটার মধ্যে পৃথিবীর বিখ্যাত মানুষের নাম লেখা থাকবে।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –