• রোববার ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ১৪ ১৪৩১

  • || ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

সূরা আল ইখলাস: তাৎপর্য ও পাঠের ফজিলত

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪  

সূরা আল ইখলাস পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ আল কোরআনুল কারিমের ১১২ নম্বর সূরা, এর আয়াত সংখ্যা ৪ এবং রূকুর সংখ্যা ১টি।সূরা ইখলাস পবিত্র কোরআন শরিফের ৩০ নম্বর পারায় আছে। সূরা ইখলাসের পূর্ববর্তী সূরা হচ্ছে সূরা লাহাব, আর পরবর্তী সূরা হচ্ছে সূরা আল-ফালাক।

সূরা আল ইখলাস মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এই সূরাটিকে প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে ব্যাখ্যা করেছেন।

তাৎপর্যের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, এই সূরাটিতে মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলার অস্তিত্ব ও সত্তার সবচেয়ে সুন্দর ব্যাখ্যা রয়েছে। এটি কোরআনের অন্যতম ছোট একটি সূরা হিসেবেও বিবেচিত হয়ে থাকে। এই সূরাটি কোরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান বলা হয়।

সূরা ইখলাসের উপকারিতা ও ফজিলত সম্পর্কে মুসলিম, তিরমিজী, আবু দাউদ ও নাসায়ীতে একাধিক হাদিস রয়েছে।

হজরত ওকবা ইবনে আমের বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমি তোমাদেরকে এমন ৩টি সূরা বলছি, যা; তাওরাত, ইঞ্জিল, জবুর এবং কোরআনসহ সব কিতাবেই অবতীর্ণ হয়েছে। রাতে তোমরা ততক্ষণ নিদ্রা যেয়ো না, যতক্ষণ সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস না পাঠ কর। ওকবা বলেন, সেদিন থেকে আমি কখনো এ আমল পরিত্যাগ করিনি (ইবনে কাসীর)

তা ছাড়া আবু দাউদ, তিরমিজী এবং নাসায়ীর এক দীর্ঘ বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পাঠ করে তা তাকে বালা-মসিবত থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যথেষ্ট হয় (ইবনে কাসীর)

সহিহ হাদিসে আছে সূরা ইখলাস ৩ বার পাঠ করলে এক খতম কোরআন তেলাওয়াতের সমপরিমান সওয়াব পাওয়া যায়। বোখারিতে আয়েশা (রা.) থেকে এক রেওয়ায়েতে উল্লেখ আছে, এক যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সা.) এক ব্যক্তিকে আমির নিযুক্ত করে দেন, তিনি সেনা সদস্যদের নামাজে ইমামতিকালে সূরা ফাতিহা ও অন্য সূরা শেষে প্রত্যেক রাকাতেই সূরা ইখলাস পাঠ করতেন। যুদ্ধ থেকে ফিরে লোকেরা এ ব্যাপারে অভিযোগ কররে তিনি তাকে ডেকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করেন, আমির বা নেতা উত্তর দেন যে আমি এই সূরাকে ভালোবাসি। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তাহলে আল্লাহও তোমাকে ভালোবাসে। (বোখারি কিতাবুল মাগাযী দেখুন)

বোখারির কিতাবুস সালাতে আনাস (রা.) এর সূত্রে অনুরুপ আরেকটি হাদিস বর্ণিত, কুবা মসজিদে এক আনসার সাহাবি ইমামতি করতেন, তিনি প্রত্যেক রাকাতে ফাতিহার পর সূরা ইখলাস পাঠ করে অন্য সূরা পড়তেন। লোকেরা এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে অভিযোগ করলে তিনি (সা.) তাকে ডেকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করেন, উক্ত আনসারী বললেন আমি এ সূরাকে ভালোবাসি। তাই এরূপ করি। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, এই সূরার প্রতি তোমার ভালোবাসা তোমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। (বোখারি: ১০৭ নম্বর পৃ:)

নবী (সা.) ইরশাদ করেছন, যে ব্যক্তি কুলহু আল্লাহু আহাদ সূরাটি ১০ বার পাঠ করবে আল্লাহ তাআলা জান্নাতে তার জন্য একটি বালাখানা তৈরি করে দেন। আর যে ২০ বার পাঠ করে তার জন্য ২টি বালাখানা এবং ৩০ বার পাঠ করবে তার জন্য ৩টি বালাখানা তৈরি করেন।

এ কথা শুনে হজরত ওমর (রা.) বললেন, তাহলে তো আমরা অনেক বালাখানার মালিক হয়েছি! রাসূল (সা.) বললেন, আল্লাহ তো এর চেয়ে বেশি দানকারী। (তাফ: ই: কাসীর ৪র্থ খ: ৭৩৮ পৃ:)

জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ৩টি কাজ ঈমানের সঙ্গে করতে পারবে জান্নাতের যেকোনো দরজা দিয়ে সে প্রবেশ করতে পারবে। (১) যে হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দেবে। (২) যে ব্যক্তি গোপন ঋণ পরিশোধ করবে। (৩) এবং যে প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর ১০ বার সূরা ইখলাস পাঠ করবে। (তাফ: ই: কাসীর ৪র্থ খ: ৭৩৮ পৃ:)

সূরা আল-ইখলাসের শানে নুযুল

মুশরিকরা হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-কে আল্লাহ তাআলার বংশপরিচয় জিজ্ঞেস করেছিল, যার জওয়াবে এই সূরা নাজিল হয়। অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে যে, মদিনার ইহুদিরা এ প্রশ্ন করেছিল। কোনো কোনো রেওয়ায়েতে আছে যে, তারা আরো প্রশ্ন করেছিল, আল্লাহ তাআলা কিসের তৈরি, স্বর্ণ-রৌপ্য অথবা অন্য কিছুর? এর জওয়াবে সূরাটি অবতীর্ণ হয়েছে ৷

সূরা আল-ইখলাস

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

আরবি উচ্চারণ : বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

বাংলা অনুবাদ : পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।

(১) قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ

আরবি উচ্চারণ: কুল্ হুওয়াল্লা-হু আহাদ্।

বাংলা অনুবাদ: বল, তিনিই আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়।

(২) اللَّهُ الصَّمَد

আরবি উচ্চারণ: আল্লা-হুচ্ছমাদ্।

বাংলা অনুবাদ: আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী।

(৩) لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ

আরবি উচ্চারণ: লাম্ ইয়ালিদ্ অলাম্ ইয়ূলাদ্।

বাংলা অনুবাদ: তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয়নি।

(৪) وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَد

আরবি উচ্চারণ: অলাম্ ইয়া কুল্লাহূ কুফুওয়ান্ আহাদ্।

বাংলা অনুবাদ: আর তার কোনো সমকক্ষও নেই।

ইয়া আল্লাহ! আমাদের সবাইকে সূরা ইখলাস পাঠের প্রতি যত্নবান হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –