• বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ৮ ১৪৩১

  • || ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

তায়াম্মুম করবেন যখন যেভাবে

লালমনিরহাট বার্তা

প্রকাশিত: ২ ডিসেম্বর ২০১৮  

প্রতিটি মুমিন মুসলমানের জন্য পবিত্রতা অর্জন অবশ্যকীয় কাজ। কারণ অধিকাংশ ফরজ ইবাদত পবিত্রতা ব্যতীত আদায় হয় না।

অন্তত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য পাঁচ বার তাকে পবিত্রতা অর্জন করতে হয়। পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম হলো পানি। পানির অনুপস্থিত হলে বা পানি পাওয়া দুষ্প্রাপ্ত হলে পবিত্রত অর্জন করতে হয় মাটি দ্বারা। মাটি দ্বারা পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতির নাম হলো তায়াম্মুম।

তায়াম্মুম কখন ফরজ হয়:

এই উম্মতের ওপর আল্লাহর তায়ালার বিশেষ অনুগ্রহসমূহের একটি হলো তায়াম্মুম তথা মাটি দ্বারা পবিত্রতা অর্জনের অনুমোদন। আগের যমানায় এই পদ্ধতি ছিল না। বরং পবিত্রতা আদায় ছিল রীতিমত একটি কষ্ট সাধ্য ব্যাপার। কিন্তু মহান আল্লাহ এই উম্মতের ওপর অনুগ্রহ করে পবিত্রতা অর্জনকে সহজসাধ্য করেছেন। পানির অনুপস্থিতিতে মাটি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করার বিধান। ৬ষ্ঠ হিজরির শাবান মাসে গাযওয়ায়ে বনু বসতালিক যুদ্ধ থেকে ফিরার পথে যাতুশ জায়শ নামক স্থানে হজরত আয়েশা রাযিআল্লাহু আনহু আর গলার হার হারিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিম্মোক্ত আয়াতে আল্লাহ তায়াম্মুমের কথা ষোঘণা দেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلاةِ فاغْسِلُواْ وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُواْ بِرُؤُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَينِ وَإِن كُنتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُواْ وَإِن كُنتُم مَّرْضَى أَوْ عَلَى سَفَرٍ أَوْ جَاء أَحَدٌ مَّنكُم مِّنَ الْغَائِطِ أَوْ لاَمَسْتُمُ النِّسَاء فَلَمْ تَجِدُواْ مَاء فَتَيَمَّمُواْ صَعِيدًا طَيِّبًا فَامْسَحُواْ بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُم مِّنْهُ مَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُم مِّنْ حَرَجٍ وَلَكِن يُرِيدُ لِيُطَهَّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

অর্থ : হে মুমিনগণ! তোমরা যখন নামাজের জন্য উঠবে তখন নিজেদের চোহরা ও কনুই পর্যন্ত নিজেদের হাত ধুয়ে নিবে, নিজেদের মাথাসমূহ মাসেহ করবে এবং টাখনু পর্যন্ত নিজেদের পাও (ধুয়ে নেবে)। তোমরা যদি জানাবত অবস্থায় থাক তবে নিজেদের দেহ (গোসলের মাধ্যমে) ভালোভাবে পবিত্র করে নেবে। তোমরা যদি পীড়িত হও বা সফরে থাক কিংবা তোমাদের মধ্যে কেউ শৌচস্থান থেকে আসে অথবা তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে দৈহিক মিলন করে থাক এবং পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করবে এবং (মাটি) দ্বারা নিজেদের চেহারা ও হাত মাসেহ করবে। আল্লাহ তায়ালা তোমাদের ওপর কোনো কষ্ট চাপাতে চান না; বরং তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান এবং তোমাদের প্রতি স্বীয় নিয়ামত পরিপূর্ণ করতে চান, যাতে তোমরা শুকরগোজার হয়ে যাও। (সূরা মায়েদাহ, আয়াত নং ০৬)

অন্য একটি হাদিসে হজরত আয়েশা রাযিআল্লাহু আনহু বলেন, একবার আমার কাছ থেকে হজরত আসমা রাযিআল্লাহু আনহু আর গলার হারটি হারিয়ে গেল। সেই হারের সন্ধানে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোক পাঠিয়েছিলেন। ওইখানে নামাজের সময় হয়ে গেল। তাদের ওজু ছিলনা। ওজুর জন্য পানিও পেলনা। এমতাবস্থায় তারা ওজু ছাড়া নামাজ পড়ে নিলো। তখন আল্লাহ তায়ালা তায়াম্মুম সংক্রান্ত আয়াত নাজিল করেন। (সহিত বুখারি, হাদিস নং ৪২২৮) হাদিসটি নিম্মে দেওয়া হলো,

عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ : هَلَكَتْ قِلاَدَةٌ لِأَسْمَاءَ، فَبَعَثَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي طَلَبِهَا رِجَالًا، فَحَضَرَتِ الصَّلاَةُ وَلَيْسُوا عَلَى وُضُوءٍ، وَلَمْ يَجِدُوا مَاءً، فَصَلَّوْا وَهُمْ عَلَى غَيْرِ وُضُوءٍ، فَذَكَرُوا ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَنْزَلَ اللَّهُ آيَةَ التَّيَمُّمِ

তায়াম্মুমের কখন করতে হয়:

পানির অনুপস্থিতিতে অথবা পানি আছে কিন্তু তা দ্বারা ওজু করলে জীবনের ওপর আশঙ্কা আসবে। পিপাসায় মরণপণ হয়ে যাবে। তখন পানির পরিবর্তেন মাটি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা তথা তায়াম্মুম করা যাবে।

রাসূল পানি না পেলে তায়াম্মুম করতেন:

وعن سلمان الفارسي رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إذا كان الرجل بأرض قي فحانت الصلاة فليتوضأ فإن لم يجد ماء فليتيمم فإن أقام صلى معه ملكاه وإن أذن وأقام صلى خلفه من جنود الله ما لا يرى طرفاه

অর্থ : হজরত সালমান ফারসী রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- যদি কোনো ব্যক্তি মাঠে থাকে, আর এমতাবস্থায় নামাজের সময় হয়ে যায় তবে সে প্রথমে অজু করবে। যদি অজুর পানি না পায় তবে তায়াম্মুম করবে। এরপর যখন সে ইকামত দিয়ে নামাজ আদায় করে তখন তার (আমলনামা লেখক) দুই ফেরেশতা তার সঙ্গে নামাজ আদায় করে আর যদি আজান ও ইকামত (উভয়টি) দিয়ে নামাজ আদায় করে তাবে তার পেছনে আল্লাহ তায়ালার এত বিশাল বাহিনী (ফেরেশতা) নামাজ আদায় করেন যার দুই কিনারা দৃষ্টিগোচর হয় না। (মুসান্নোফে আব্দুর রাজ্জাক ০১/৫১০)

عن عبد الرحمن رضي الله عنه قال : قال عمار لعمرتمعكت فأتيت النبي صلي الله عليه وسلم فقال يكفيك الوجه والكفين

অর্থ: হজরত আব্দুর রহমান ইবনে আবযা রাযিআল্লাহু আনহু তার পিতা (আব্দুল রহমান) থেকে বর্ণনা করেন, হজরত আম্মার রাযিআল্লাহু আনহু বলেছেন- একবার (তায়াম্মুমের উদ্দেশ্যে) নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাটিতে হাত মারলেন এবং তার চেহারা ও হস্তদ্বয় মাসেহ কররেন।

পানি না পেলে গোসল ফরজ অবস্থায়ও তায়াম্মুম করবে:

عن أبي رجاء قال حدثنا عمران بن حصين الخزاعي أن رسول الله صلى الله عليه و سلم رأى رجلا معتزلا لم يصل في القوم فقال (يا فلان ما منعك أن تصلي في القوم). فقال يا رسول الله أصابتني جنابة ولا ماء قال (عليك بالصعيد فإنه يكفيك)

গোসল ফরজ হওয়া অবস্থায় পানি না পেলে তায়াম্মুম করবে। হজরত আবু রজা রাযিআল্লাহু আনহু বর্ণিত, তিনি বলেন- হজরত ইমরান ইবনে হুসাইন আল খযাই রাযিআল্লাহু আনহু বলেন। একবার নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখলেন যে, এক ব্যক্তি জামাতে নামাজ না পড়ে পৃথক স্থানে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি লোকটিকে ডাকলেন। এই মিয়া! তুমি জামাতে নামাজ আদায় করনি কেন? সে বললো- ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার ওপর গোসলের হাজত ছিল। কিন্তু পানি পেলাম না। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- তুমি পবিত্র মাটি ব্যবহার (তায়াম্মুম) করবে। এটিই তোমার জন্য যথেষ্ট হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৩৪১)

রাসূল যেভাবে তায়াম্মুম করতেন:

عَنْ جَابِرٍ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ فَقَالَ أَصَابَتْنِى جَنَابَةٌ وَإِنِّى تَمَعَّكْتُ فِى التُّرَابِ . قَالَ اضْرِبْ. فَضَرَبَ بِيَدِهِ الأَرْضَ فَمَسَحَ بِهَا وَجْهَهُ ثُمَّ ضَرَبَ بِيَدَيْهِ أُخْرَى فَمَسَحَ بِهِمَا يَدَيْهِ إِلَى الْمِرْفَقَيْنِ

অর্থ : হজরত জাবির রাযিআল্লাহু আনহু বর্ণিত, তিনি বলেন- এক সাহাবি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বললেন। আমার গোসল ফরজ হয়েছিলো। (কিন্তু আমি পানি না পেয়ে) মাটিতে গড়াগড়ি করেছি। তখন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- তুমি এভাবে মাটিতে হাত মারো (চাপড় দাও) তারপর নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই মাটিতে হাত মারলেন এবং স্বীয় চেহারা (মুখমণ্ডল) মাসেহ করলেন। এরপর পুনরায় তিনি মাটিতে হাত মারলেন এবং স্বীয় হাতদ্বয় কুনই পর্যন্ত মাসেহ করলেন। (বায়হাকি শরিফ, তায়াম্মুম অধ্যায় ০১/২০)

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –