• মঙ্গলবার ০১ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ১৫ ১৪৩১

  • || ২৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

অস্তিত্ব সংকটে জাতীয় পার্টি     

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৭ জুন ২০২০  

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। বিভিন্ন দল থেকে কর্মী ভাড়া নিয়ে চলা দলটি অর্থ সংকটের কারণে সমর্থকশূন্য প্রায়। দলীয় গণতন্ত্র না থাকায় রয়েছে পারিবারিক দ্বন্দ্ব, সেই সঙ্গে রয়েছে পার্টিকে ভাঙিয়ে অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলকারী সিণ্ডিকেট চক্র। এরইমধ্যে অনৈতিক ডিও লেটারে স্বাক্ষর নিতে ব্যর্থ হয়ে এরশাদপুত্র রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদ এমপির ওপর হামলা করেছে দুর্বিত্তরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পার্টির সভাপতি মণ্ডলীর এক সদস্য জানান, জাপার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর পার্টি অস্তিত্ব সংকটে আছে। কারণ পার্টির নিজস্ব নেতাকর্মী না থাকায় ভাড়াটে কর্মী-সমর্থক দিয়ে সভা সমাবেশ জনসমাগম ও নির্বাচন কাজ চালানো হতো। এখন দল চালানোর মতো বড় কোনো ফান্ড নেই।

এদিকে হুসেইন মুহম্মদ এরশদ মৃত্যুর আগে সব অর্থ সম্পদ দিয়ে যে ট্রাস্ট গঠন করে গেছেন তা থেকে পার্টির জন্য খরচ করার মত পারিবারিক সুসম্পর্ক নেই বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের। পারিবারিক দ্বন্দ্বে একদিকে ভাতিজা এরিক এরশাদ ও তার মা বিদিশা এরশাদ আর অন্য দিকে মা রওশন এরশাদের সঙ্গে রয়েছে সাদ এরশাদ। তাই পরিবারেই এখন তিন দল। আর দলীয় গণতন্ত্র না থাকায় সিনিয়র ও বঞ্চিত নেতারাও অর্থ খরচ করতে ইচ্ছুক না পার্টির জন্য।

তাছাড়া বিরোধী দলীয় নেতা রওশনের নির্দেশে দুর্নীতির সঙ্গে আপোষ না করার সিদ্ধান্তে অটল সাদ এরশাদ।

রংপুর-৩ আসনের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করতে আগ্রহী সাদকে প্রথম থেকেই রাজনীতিতে মানতে নারাজ পার্টিকে ভাঙিয়ে অনৈতিক সুবিধা আদায়কারী সিন্ডিকেট। তারই ধারাবাহিকতায় অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে গত ২ জুন এরশাদের বাড়িতে ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। একদিকে টাকার অভাবে কর্মী-সমর্থক শূন্যতা অপরদিকে ছোটখাটো সুযোগ সুবিধা না পাওয়ায় তৃণমূল বা দলীয় সুবিধাভোগী হিসেবে পরিচিতরাও বিদ্রোহী হয়ে উঠছে। সব মিলিয়ে জাপা এখন অস্তিত্ব সংকটে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও মহানগরের সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, কোনো অনৈতিক ডিও লেটারের খবর জানি না। আর কেন্দ্রীয় পার্টি অফিসে যাওয়া হচ্ছে না করোনার জন্য। আপাতত রংপুরে শৃঙ্খলা রক্ষা নিয়ে ব্যস্ত আছি। কেউ অপরাধ করে তা ধামাচাপা দিতে কিছু ঘটনা তৈরি করে। তেমনি ঘটনার শিকার স্থানীয় এক সিনিয়র নেতা।

তিনি আরো বলেন, অভিযোগ করা হয়েছে সাদ এরশাদের ওপর হামলা এবং তার স্ত্রীর শ্লীলতাহানি করেছেন টিপু সুলতান। যার বয়স ৬২ বছর। তিনি কীভাবে শ্লীলতাহানী করেন, তা বোধগম্য নয়। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো সমস্যা হলে তা মীমাংসা করা যেতো। কিন্তু এমপি ভাড়াটে গুন্ডা দিয়ে নেতাকর্মীদের হেনস্তা করবেন, তা মেনে নেয়া যায় না। এসব ঘটনা দলের শীর্ষ নেতাদেরও জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে সাদ এরশাদ বলেন, আমি প্রথম থেকেই নোংরা রাজনীতির শিকার হচ্ছি। একটা গোষ্ঠী আমার রাজনীতিতে আসা পছন্দ করেছে না। কারণ তাদের হীন স্বার্থে ব্যাঘাত ঘটছে। আমি ন্যায়ের পক্ষে। রংপুরের মানুষ ও দেশের জন্য কাজ করতে চাই। তাই ঠিক করেছিলাম কোনো নেতার মাধ্যমে নয়, সরাসরি সরকারি সব বরাদ্দ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছে দেবো। অন্যায়ভাবে ডিও লেটারে স্বাক্ষর করিনি বলে হামলার শিকার হতে হলো। টিপু সুলতান আমাকে ও আমার স্ত্রীকে গালিগালাজ করে আমার স্ত্রীর শ্লীলতাহানি করেছে। তার নেতাকর্মীরা অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে আমার বাড়িতে ভাঙচুর করতে এসেছিল। আমি এখন জীবনের ঝুঁকিতে রয়েছি।

সাদ এরশাদের স্ত্রী মাহিমা এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টির নেতা টিপু সুলতান অশ্লীল ভাষায় আমাদের গালিগালাজ করেছে। আমাকে তেড়ে মারতে এসেছে। সেখানে জাতীয় পার্টির সভাপতি থেকে সবাই বসা ছিলো, কেউ তার কথার প্রতিবাদ করেনি। হত্যার উদ্দেশ্যে চালানো এ হামলার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এরশাদের ভাতিজা হুসেইন মকবুল শাহরিয়ার আসিফকে রাজনীতি করতে দেয়া হয়নি এই আসনে। এখন সাদ এরশাদকেও রাজনীতি থেকে সরাতে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –