• বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ৮ ১৪৩১

  • || ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

হাওলাদারকে সরানো হলো কেন ?

লালমনিরহাট বার্তা

প্রকাশিত: ৪ ডিসেম্বর ২০১৮  

একাদশ সংসদ নির্বাচনের বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। ভোটের দিন যতই এগিয়ে আসছে রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যস্ততা ততই বাড়ছে। এরই মধ্যে দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টিতে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। হঠাৎ করেই ক্ষমতাসীনদের জোটভূক্তগত দলটিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিবের পদ থেকে সরিয়ে আনা হয়েছে প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গাকে।

এর পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে আলোচনার ঝড়। ঠিক কী কারণে সরানো হলো হাওলাদারকে? নির্বাচনে জোটগুলো যখন আসন ভাগাভাগি ও প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে তুমুল ব্যস্ত, ঠিক তখনই জাপার মহাসচিব বদল করলেন এরশাদ। তার পরিবর্তে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য, এরশাদ মুক্তি আন্দোলনের সময়কার বিএনপি নেতা মশিউর রহমান রাঙ্গাকে মহাসচিবের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

কেন সরানো হলো হাওলাদারকে-

জাতীয় পার্টির একজন সিনিয়র নেতা বলেছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন নিয়ে দরকষাকষির সময় জাপায় মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে খোদ দলীয় নেতাদের মধ্য থেকেই। দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কয়েকজন প্রকাশ্যে এ সংক্রান্ত অভিযোগ আনেন। অনেকের ক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন হাওলাদার। কথিত সেই মনোনয়ন বাণিজ্যে এরশাদের নাম গণমাধ্যমে উঠে আসায় নিজের ও দলের ভাবমূর্তি রক্ষার স্বার্থেই হাওলাদারকেসোরানো হয়েছে বলে ধারণা করছেন পার্টির ওই নেতা।

পার্টির আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর মনোনয়ন নিয়ে যা ঘটেছে তাতে এরশাদ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। ‘স্যার চেয়েছিলেন বাবলু চট্টগ্রাম থেকে মহাজোটের প্রার্থী হোক। কিন্তু প্রথমে তাকে কক্সবাজারে দেয়া হয়। পরে রংপুরের একটি আসনে পার্টির প্রার্থী করা হয় বাবলুকে। এছাড়া বাবলুর গাড়িতে হামলার ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনায় এরশাদ মহাসচিবের ওপর ক্ষুব্ধ হন।

তাকে কেন সরিয়ে দেয়া হয়েছে কিংবা মনোনয়ন বাণিজ্য সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য হাওলাদারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তবে তার স্ত্রী নাসরিন জাহান রত্না বলেছেন, তার স্বামীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। তিনি বলেন, মহাসচিব পরিবর্তন করেছেন পার্টির চেয়ারম্যান এবং সে এখতিয়ার উনার আছে।

হাওলাদার কবে থেকে মহাসচিব-

সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন থেকেই জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত রুহুল আমিন হাওলাদার। র্দীঘদিন দিন ধরে ছিলেন মহাসচিবের দায়িত্বে। তবে মহাসচিব হিসেবে তার পদচ্যুতির ঘটনা এর আগেও ঘটেছিল।

এরশাদের সাবেক এই মন্ত্রী প্রথম মহাসচিব হয়েছিলেন ২০০২ সালে। দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনের পর ২০১৩ সালের এপ্রিলে তাকে অব্যাহতি দেন এরশাদ। কিন্তু এর দুই বছর পরই ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে তাকে ফের মহাসচিব করেন এরশাদ। এবার তাকে সরিয়ে তুলে আনলেন মশিউর রহমান রাঙ্গাকে। যিনি একজন প্রতিমন্ত্রী।

এরশাদ হাসপাতালে, দল চালিয়েছে কে?

প্রায় এক সপ্তাহ ধরে অসুস্থতার জন্য সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ছিলেন এরশাদ। এর মধ্যেই সরকারি দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোটের আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা করেছেন হাওলাদার। সে আলোচনার প্রেক্ষাপটেই পার্টি থেকে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে, কারা মহাজোটের মনোনয়ন পাবেন। জোটের মননোয়নে হাওলাদার নিজের ও স্ত্রীর মনোনয়ন নিশ্চিত করলেও, পার্টির অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য সালমা ইসলামসহ দলের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার প্রার্থিতা চূড়ান্ত করতে পারেননি।

ফলে ক্ষুব্ধ হয়ে সালমা ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন। আর উত্তরাঞ্চলের আরেক জনপ্রিয় নেতা আবদুর রশীদ সরকার ও রোকন উদ্দিন বাবুল বিএনপিতে যোগ দিয়ে মনোনয়ন পেয়েছেন। সালমা ইসলাম বর্তমান এমপি। অন্যদিকে, সরকার একজন সাবেক এমপি।

দলটির একজন সিনিয়র নেতা বলছেন, তিনি মনে করেন ক্ষোভ সামাল দেয়া, ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনা এবং দলের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এরশাদ।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –