• বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ৮ ১৪৩১

  • || ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

লালমনিরহাটে নারীদের হাতে কৃষি বিল্পব

লালমনিরহাট বার্তা

প্রকাশিত: ২ ডিসেম্বর ২০১৮  

‘নিজের কাজ নিজে করতে লজ্জা নাই। মহিলারা উরু জাহাজ চালায়। হামরা ভ্যান চাল্যায়া নিজের ক্ষেতের ধান বাড়িত নিয়া যাই। চুরি তো করি না, কাজ করি খাই। দুই জনে (স্বামী-স্ত্রী) না খাটলে সংসার চলে না ভাই।’ এভাবে কথাগুলো বলছিলেন লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সাপুকুর ইউনিয়নের তালুক হরিদাস গ্রামের দিনমজুর খগেন্দ্র নাথের স্ত্রী কৃষাণী কণিকা রানী। 

কণিকা রানী বলেন, স্বামী খগেন্দ্র নাথ ও দুই মেয়েকে নিয়ে আমার সংসার। নিজের জমি বলতে ভিটাবাড়ি। স্বামী অন্যের জমিতে কাজ করে দৈনিক ৩০০ টাকা আয় করে। তা দিয়ে দুই মেয়ের পড়াশোনা ও সংসার খরচ চালানো যায় না। তাই প্রতি বছর জমি বর্গা নিয়ে ধানসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ করি। চাষাবাদের কাজ আমি নিজেই করি। বড় মেয়ে হরিপ্রিয়া রানী স্থানীয় হরিদাস উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণিতে ও ছোট মেয়ে মণিকা রানী হরিদাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে। দুই মেয়েকে শিক্ষিত করে বড় পদে চাকরি পাইয়ে দিতেই এ সংগ্রাম যোগ করেন তিনি।

কণিকা রানী বলেন, মাঠে কাজ করলে কেউ কিছু কই না। তবে ভ্যান গাড়ি টেনে নিতে দেখলে অনেকেই অবাক চোখে দেখে। ভাইরে সংসারে খাবার না থাকলে তো কেউ খাওয়ায় না। তবে কাজ করতে লজ্জা কিসের। চুরি তো করি না।

ওই এলাকার স্কুল শিক্ষক রামকৃষ্ণ জানান, পুরো হরিদাস এলাকার মধ্যে সব থেকে পরিশ্রমী নারী কনিকা রানী। ফসল বোনা থেকে শুরু করে মাঠের যাবতীয় কাজ তিনি করতে পারেন। গ্রামের নারীরা তার অনুকরণ করে কৃষি কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে শুরু করেছে। মাঠে কাজ করলেও মেয়েদের লেখাপড়ার প্রতিও তিনি খেয়াল রাখেন।

ওই গ্রামের কলেজ ছাত্র জাহেদ মিয়া জানান, কণিকা রানী একজন পরিশ্রমী নারী। কখনো অলস সময় পার করেন না। রান্না ঘর থেকে ফসলের মাঠ, সবখানেই কাজ করেন তিনি। এভাবে কৃষি কাজ করে সংসারের স্বচ্ছলতা ফিরেয়ে এনেছেন তিনি। প্রতি বছর ফসল বিক্রি করেই বন্ধক নিয়ে ফসলি জমিও কিনেছেন তিনি।

সারপুকুর ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম জানান, পৃথিবীতে কৃষির শুভ সূচনা হয়েছে নারীদের হাত থেকে। এ কথার ভিত্তি বোঝা যায় কনিকা রানীর কৃষি কাজের আগ্রহ দেখে। প্রতিটি ফসল চাষে নিজেই মাঠে নেমে পড়েন তিনি। আলস্য নেই। স্বামীকে অন্যের ক্ষেতে দিন মজুরিতে পাঠিয়ে নিজেই মাঠ থেকে ঘর পর্যন্ত দেখাশোনা করেন। এভাবে এ উপজেলার অনেক নারী কৃষি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –