• বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ৮ ১৪৩১

  • || ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

পাহাড় কেটে নির্মিত প্রতিকৃতি!

লালমনিরহাট বার্তা

প্রকাশিত: ১০ নভেম্বর ২০১৮  

পাহাড় খোদাইকৃত প্রতিকৃতি দেখতে নিশ্চয়ই কেমন লাগবে ভেবে দেখেছেন? আর এটি যদি একসঙ্গে কয়েকজনের প্রতিকৃতি হয়? হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন, বলছি বিখ্যাত স্মৃতিস্তম্ভ মাউন্ট রাশমোরের কথাই। যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ডাকোটা রাজ্যের অন্তর্গত ব্ল্যাক হিলস জাতীয় পার্কের এক অনন্য স্মৃতিস্তম্ভ হচ্ছে এই মাউন্ট রাশমোর। মূলত মার্কিন চার সম্মানিত রাস্ট্রপতির সম্মানার্থে নির্মিত এই বিখ্যাত মাউন্ট রাশমোরের সৃতিস্তম্ভ। এই বিখ্যাত চার প্রেসিডেন্ট হলেন জর্জ ওয়াশিংটন, থমাস জেফারসন, থিওডোর রোজভেল্ট এবং আব্রাহাম লিংকন।

মজার বিষয় হচ্ছে, তাদের কারো নামেই কিন্তু এই প্রতিকৃতির নামকরণ করা হয়নি। প্রশ্ন আসতে পারে কেন? আসলে এই মাউন্ট রাশমোর স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের অনেক আগেই এই জায়গাটির নামকরণ করা হয়। যার নামে এই নামকরণ তিনি হলেন নিউ ইয়র্কের উকিল চার্লস রাশমোর। ১৮৮০ সালে রাশমোরে সরকারি তত্ত্বাবধায়নে ব্ল্যাক হিলস অঞ্চলটি ঘুরতে আসেন মূলত সেখানকার জমিজমাভিত্তিক আইনী কাজের উদ্দেশ্যে। তার গাইড হিসেবে স্থানীয় এক আদিবাসী বিল চ্যালিস নিযুক্ত ছিলেন। তার সঙ্গে করেই রাশমোরে পুরো ব্ল্যাক হিলস অঞ্চলটি ঘুরে দেখার সময় চ্যালিসকে পাহাড়টির নাম জিজ্ঞাসা করেন। উত্তরে চ্যালিস বলেন, ‘এই পাহাড়ের কোনো নাম নেই। তবে আজ থেকে এই পাহাড়ের নাম দেয়া হলো রাশমোরে।’ পরবর্তীতে পাহাড়টি মাউন্ট রাশমোরে নামেই পরিচিত।

মাউন্ট রাশমোরের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্দেশ্য

যুক্তরাষ্ট্রের এই রাজ্যটিতে সেই সময়ে সাধারণত বাইরের কোনো লোক সমাগম হতো না। তখন স্থানীয় ইতিহাসবিদ ডোয়ান রবিসন ভাবলেন কি করলে এখানে অধিক পর্যটক আসবে। অনেক ভাবনা চিন্তা শেষে তিনি ঠিক করলেন এখানে ভিন্ন এক ভাস্কর্য নির্মাণ করলে মন্দ হয় না! তাই তিনি ব্ল্যাক হিলসে পাহাড় খোদাই করে বিশেষ এক ভাস্কর্য নিমার্ণ করার সিদ্ধান্ত নেন। এই ভাস্কর্যগুলো মূলত নির্মাণের মূল কারণ ছিলো ডাকোটায় পর্যটক সমাগমের প্রসার ঘটানো।

ডোয়ান রবিনসন চেয়েছিলেন মাউন্ট রাশমোরের এই ভাস্কর্য হবে অনেকের প্রতিকৃতি নিয়ে। তিনি ভাবতে শুরু করলেন কাদের প্রতিকৃতি দেখতে অধিক সংখ্যক মানুষ পরিদর্শন করতে আসবে। তবে অনেক ভাস্কর সেখানে প্রেসিডেন্টদের প্রতিকৃতি বানানোর পরামর্শ দেন। কারণ, মার্কিনরা তাদের রাষ্ট্রপতিদেরকে যথেষ্ট ভালোবাসেন আর সম্মানও করেন। আর যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতিরা বিশ্বব্যাপিই পরিচিত। তাই তিনি রাষ্ট্রপতিদের ভাস্কর্য নির্মাণের জন্য রবিনসনকে প্রস্তাব করেন। সেই ভাবনা অনুসারেই তৈরি করা হয় বিখ্যাত চার রাষ্ট্রপতির প্রতিকৃতি।

কেনো এই চারজন রাস্ট্রপতিরই ভাস্কর্য?

কিন্তু এই চারজনই কেনো? কারণ, জর্জ ওয়াশিংটন ব্রিটিশদের থেকে মার্কিনদের স্বাধীন করতে বড় অবদান রাখেন, তিনিই যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি এবং মার্কিন জাতির জনক, থমাস জেফারসনের অসাধারন নেতৃত্বের জন্য অন্যতম জনপ্রিয় রাষ্ট্রপতি এবং স্বাধীনতার ঘোষক ছিলেন, রাষ্ট্রপতি থিওডোর রোজভেল্ট ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের দ্রুত অগ্রগতির নায়ক এবং আব্রাহাম লিংকন মার্কিন গৃহযুদ্ধ বন্ধের ত্রাতা ও যুক্তরাষ্ট্রের সর্বকালের অন্যতম জনপ্রিয় রাষ্ট্রপতি ছিলেন।

মাউন্ট রাশমোর ভাস্কর্যের নির্মাণ

প্রখ্যাত ভাস্কর গুটিজন বোরগ্লুমের নেতৃত্বে এই প্রকল্পটির কাজ ১৯২৭ সালে শুরু হয়। দীর্ঘ এগারো বছর পর অবশেষে ১৯৪১ সালে এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। দীর্ঘ এই সময়কাল ধরে প্রায় ৪০০ শ্রমিক বিপজ্জনক অবস্থায় ভাস্কর্যটি নির্মাণ করে। প্রতিটি ভাস্কর্যের মাথা খোদাইয়ের জন্য এবং বিপুল পরিমাণে প্রায় (৪ লাখ ৫০ হাজার টন) শিলামাটি অপসারণ করতে হয়েছিল। প্রতিটি ভাস্কর্যের খোদাইকৃত মাথা ৬০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট। মূলত চার প্রেসিডেন্টের ভাস্কর্যের কোমর থেকে মাথা পর্যন্ত খোদাই করে নির্মাণের কথা থাকলেও যুদ্ধের কারণে এর অর্থায়ন হয়ে উঠে নি। পাহাড় খোদাই করে ভাস্কর্য বানানো শুনতে যতটা সহজ শোনা যায় নির্মাণ ততই কঠিন ছিলো।এই বিশাল আকারের স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণের জন্য খোদাই করার কাজটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ছিলো। নির্মাণ শ্রমিকরা বেশ কিছুবার খোদাইয়ের সময় ডাইনামাইট পর্যন্ত ব্যবহার করেছিলো। কিন্তু সৌভাগ্যের বিষয় হলো এই বিপজ্জনক নির্মাণ কাজে কোনো শ্রমিকই মারা যায় নি।

ক্রেজি হর্স মেমোরিয়াল

গণতন্ত্রের শৃঙ্খলা রক্ষাকারী নামে খ্যাত এই মাউন্ট রাশমোর ভাস্কর্যটি দেখতে প্রতি বছর প্রায় ২ মিলিয়ন দর্শনার্থীরা স্থানটিতে ভীড় জমায়। তবে অনেক মার্কিন আদিবাসীরা এই সৃতিস্তম্ভটি পছন্দ করে না। কারণ এই স্থানটি এক সময় তাদের দখলে ছিলো। তৎকালীন মার্কিন সরকার তাদের জমি দখল করে এই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে। বদলে তাদের কিছুই দেয়া হয়নি। তাই এই মাউন্ট রাশমোরের কাছেই পাহাড় খোদাই করে আরেকটি ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয় যা ‘ক্রেজি হর্স মেমোরিয়াল’ নামে পরিচিত। এই ভাস্কর্যটি মাউন্ট রাশমোরের চারটি ভাস্কর্যের চেয়েও বিশাল আকৃতির।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –