• বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ৮ ১৪৩১

  • || ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

উম্মুক্ত ‘গুরু দুয়ারা নানকশাহী’

লালমনিরহাট বার্তা

প্রকাশিত: ৯ নভেম্বর ২০১৮  

জাত পাত দেখা হয় না। সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের জন্য খোলা রয়েছে ‘গুরু দুয়ারা নানকশাহী’। সব বয়সের মানুষ আসতে পারে প্রতিষ্ঠানটির লঙ্গরখানায়।

এমন তথ্যই জানালেন ধর্মীয় সংগঠনটির ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি পরেশ লাল বেগি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে শিখ সম্প্রদায়ের গুরুদুয়ারা নানকশাহীর ভেতরে প্রবেশ করা মাত্রই চোখে পড়ে কয়েক সারিতে বসে খাবার গ্রহণ করছেন নানা ধর্মের, নানা বয়সের মানুষ। কয়েকজন নিরলস ভাবে খাবার পরিবেশন করছে। থালাবাটিও পরিষ্কার করছেন তারা। কোনো বিরক্তি বা ক্লান্তি নেই চোখে মুখে। মনের আনন্দেই কাজ করে যাচ্ছেন তারা। নারীদের জন্যও রয়েছে পৃথক খাবার ঘর।

প্রতি শুক্রবার সর্বসাধারণের জন্য খোলা থাকে এই লঙ্গরখানা। আর শনিবার শুধু দরিদ্র, নিম্নআয়ের মানুষের আগমন ঘটে এখানে। এখানে খাবার দেয়া হয় বিনামূল্যে।

ভক্তদের ডোনেশন (চাঁদা) থেকেই এর খরচ নির্বাহ করা হয়। এমনকি বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করা হয় এ গুরুদুয়ারা থেকে।

বাংলাদেশ গুরু দুয়ারা ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি পরেশ লাল বেগি ডেইলি বাংলাদেশের প্রতিবেদককে একে একে ঘুরিয়ে দেখান গুরুদুয়ারার অন্দরমহল। প্রার্থনার ঘর থেকে ভোজনালয় বা লঙ্গরখানা।

শিখ ধর্মের প্রবর্তক গুরু নানক দেব ষোড়শ শতাব্দীতে সর্ব প্রথম ২০ টাকা দিয়ে সর্বসাধারণের জন্য লঙ্গর প্রথা আরম্ভ করেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতা রক্ষা করে যাচ্ছে গুরুদুয়ারাগুলো।

পরেশ লাল জানান, গুরুদুয়ারায় অতিথিদের জন্য রয়েছে থাকার ঘর। বাংলাদেশে বিশ্বমানের হাসপাতাল তৈরি করার ইচ্ছা রয়েছে তাদের। যেখান থেকে মানুষ বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা পাবে।

গুরুদুয়ারা ম্যানেজমেন্ট কমিটির প্রেসিডেন্ট বলেন, গুরুদুয়ারা থেকে একটি মানুষও না খেয়ে যেতে পারে না। যারা এখানে আসে তাদের সবার জন্যই খাবারের ব্যবস্থা করা হয়।

মানুষের সেবাই আমাদের মূল লক্ষ্য। কথা প্রসঙ্গে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি। বললেন তার আন্তরিকতার জন্যই পাসপোর্টে তারা ধর্ম হিসেবে ‘শিখ’ উল্লেখ করতে পারছেন। এর আগে পাসপোর্ট ফর্মে ধর্ম হিসেবে হিন্দু লিখতে হত।

তিনি জানান, বাংলাদেশে বর্তমানে ৫০ হাজার শিখ ধর্মাবলম্বী রয়েছে।

গুরুদুয়ারা নানকশাহীতে প্রতিদিন সকালে জাপুজী সাহেবেন পাঠ,পবিত্র ধর্মগ্রন্থ শ্রী গুরু গ্রন্থ সাহেবের পাঠ ও প্রার্থনা কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যায় রেহরাস সাহেবের পাঠের মাধ্যমে প্রার্থনার সমাপ্তি হয়।

ঘুরতে ঘুরতে চোখে পড়ে শিখ ধর্মাবলম্বীদের নবম গুরু তেগ বাহাদুর সাহেবের খড়ম আর সহস্তে লিখিত স্বর্ণখচিত নকশায় আদি গুরু গ্রন্থ সাহিব।

ম্যানেজমেন্ট কমিটির সাধারণ সম্পাদক তাপস লাল চৌধুরী বলেন, গুরু তেগ বাহাদুর ঢাকা থেকে পাটনা চলে যাওয়ার সময় ভক্তদের অনুরোধে তার পায়ের খড়ম আর নিজ হাতে লেখা গুরু গ্রন্থ সাহিব রেখে যান। যা এই গুরু দুয়ারায় রয়েছে। তিনি বলেন, শিখ ধর্মাবলম্বীদের কাছে এগুলো অনেক মূল্যবান।

তাপস লাল চৌধুরী বলেন, পবিত্র রমজান মাসে গরীব ও খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য গুরু দুয়ারার পক্ষ থেকে ইফতারের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে।

বাংলাদেশ গুরুদুয়ারা ম্যানেজমেন্ট কমিটি এবং জাতিসংঘের এফিলিয়েটেড প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড শিখস অরগানাইজেশন এর যৌথ সহযোগীতায় কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলায় ও বালুখালিতে ৪৫ দিন ১০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের খাবার ও ত্রাণ বিতরণ করা হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে নিহতদের পাশে দাঁড়িয়েছিল গুরু দুয়ারা ম্যানেজমেন্ট কমিটি। সেইসঙ্গে ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ায় গুরুদুয়ারা ম্যানেজমেন্ট কমিটি।

সভাপতি পরেশ লাল বেগি গুরুদুয়ারার উন্নয়নে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধ্বংস হওয়া গুরু দুয়ারাগুলো পুনঃনির্মাণে সহায়তা দেন জাতির জনক। তারই নির্দেশে ক্যাপ্টেন ভাগ সিং এর নেতৃত্বে গঠিত হয় বাংলাদেশ গুরুদুয়ারা ম্যানেজমেন্ট বোর্ড। আর এ বোর্ডের হাতেই ধ্বংস হয়ে যাওয়া ৫টি গুরুদুয়ারার দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হয়।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে গুরুদুয়ারার সম্পত্তিতে আন্তর্জাতিক গুরু নানক হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য আবেদন করেছি।

গুরুদুয়ারা ম্যানেজমেন্ট কমিটি সম্পূর্ণ শিখ ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে পরিচালিত। এক সময় কয়েকজন হিন্দু এ কমিটিতে ছিল ।শিখরা নিরামিষাশী হওয়া সত্বেও তারা গুরুদুয়ারায় মাংস এনে পরিবেশ নষ্ট করায় তাদের কমিটি থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।

কমিটির নির্বাহী সদস্য প্রবীর কুমার বেগী বলেন, আমরা সব সময় সেবা দিতে প্রস্তুত আছি। এখানে জাত-পাত, ধর্ম বিচার করা হয় না।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –