দেশের চলমান অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে দিন দিন বেড়েই চলেছে কর আদায়ের পরিমাণ ও কারদাতার সংখ্যা। ২০১৪ থেকে চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত- এই চার বছরে দেশে করদাতার সংখ্যা বেড়েছে তিনগুণেরও বেশি। এছাড়া বেড়েছে কর আদায়ের পরিমাণও। যা বর্তমানে ৩০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

শুক্রবার সকালে জাতীয় কর দিবস উপলক্ষে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভবন প্রাঙ্গণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে এনবিআর সদস্য (আন্তর্জাতিক করনীতি) কালিপদ হালদার বলেন, আমাদের লক্ষ্য হলো করদাতার সংখ্যা ১ কোটিতে উন্নীত করা। ২০১৪ সালে করদাতা ছিলো মাত্র ১২ লাখ। ২০১৭ সালে যা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৩২ লাখ। আর এ বছর হয়েছে ৩৮ লাখ। অর্থাৎ মাত্র চার বছরে করদাতার সংখ্যা তিনগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে দেশে প্রকৃত কর আদায়ের পরিমাণও বেড়েছে অনেক, যা গেল ১০ বছরে পাঁচগুণ হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, সামাজিক ভারসাম্য ও দায়িত্ব বজায় রাখতে আয়কর দিতে হয়। করদাতাদের ভেতর আয়কর নিয়ে আগে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ছিলো। কিন্তু আয়কর মেলা ও দিবস পালনের মাধ্যমে এটা অনেকটা দূর হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে এনবিআরের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম জানান, দেশে সব মিলিয়ে এখন কর আদায়ের পরিমাণ ৩০ বিলিয়ন ডলার। কর আদায়ের পরিমাণ দশগুণ বাড়ানো সম্ভব হলে আমরা উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছে যাবো। এ লক্ষ্যে করবান্ধব পরিবেশ তৈরি করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে এনবিআর।

তিনি আরো জানান, রিটার্ন দাখিল গেল দুই বছর ধরে ৪০ শতাংশ হারে বাড়ছে। আমাদের সক্রিয় করদাতা এখন ১৫ লাখ। এটা ১ কোটিতে উন্নীত হলে দেশে উন্নয়নের গতি আরো বাড়বে। এছাড়া কর অনুপাত ১২ শতাংশে নিয়ে যেতে পারলে অর্থনীতি মজবুত হবে।

এ সময় কর সংক্রান্ত যাবতীয় সেবা প্রক্রিয়াকে জনবান্ধন করতে এনবিআরকে ভবিষ্যতে আরো বেশি ডিজিটাল হতে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

আয়কর প্রদানে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছর দেশব্যাপী ৩০ নভেম্বর আয়কর দিবস পালন করে এনবিআর। দিবসটির স্লোগান ‘উন্নয়ন ও উত্তরণ, আয়করের অর্জন’। আর প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘আয়কর প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে সামাজিক ন্যায়বিচার ও ধারাবাহিক উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ’।

দিবসটি উপলক্ষে প্রতি বছর বর্ণাঢ্য র‌্যালির আয়োজন থাকলেও এবার নির্বাচন কমিশনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় তা হয়নি। তবে ভবন প্রাঙ্গণে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সংস্থাটি।

কর বিষয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা এবং সম্পৃক্ততা বাড়াতে এবার অন্যান্য বছরের মতো আয়কর দিবসের অনুষ্ঠানে দেশের বরেণ্য মিডিয়া তারকারা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে চিত্রনায়ক ফেরদৌস বলেন, কর প্রদানে সবাইকে সচেতন হতে হবে। বিশেষত তরুণদের। এছাড়া চিত্রনায়ক রিয়াজ বলেন, অর্থমন্ত্রীর মতোই আমিও বলবো কর দেয়া বাহাদুরি। কর দেয়া অভ্যাসের ব্যাপার। তাই সবাইকে এ অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। পদ্মা সেতুর কোনো একটি রড আমার টাকায় কেনা, এটা নিয়ে আমি মনেপ্রাণে গর্ববোধ করি।

গায়ক শুভ্র দেব বলেন, সবাইকে কর দিতে হবে। এখন কর প্রদানের পরিবেশ খুবই ভালো। নিজেদের টাকায় আমরা পদ্মা সেতুর মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারলে, বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু টাওয়ারও করতে পারবো আমরা।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যর মধ্যে এনবিআর সদস্য (আয়কর) জিয়া উদ্দিন মাহমুদসহ বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞ, অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দসহ এনবিআরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –