• রোববার ২০ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ৩ ১৪৩১

  • || ১৫ রবিউস সানি ১৪৪৬

হাবিপ্রবির বিশাল গবেষণা মাঠে সূর্যমুখীর হাসি

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৯ জুন ২০২১  

বিকেল হলেই শিক্ষার্থী এবং দর্শনার্থীদের ভিড় জমছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা মাঠে। তবে গবেষণার উদ্দেশ্যে নয় বরং বিকেলের স্নিগ্ধ আভায় সূর্যমুখী ফুলের সৌন্দর্য অবলোকন করতেই তাদের এই পাদচারণা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল গবেষণা মাঠে নীল আকাশের নিচে হলুদ সূর্যমুখী ফুলের এমন সৌন্দর্য অনেকেরই নজর কাড়ছে। সঙ্গে প্রজাপতি আর মৌমাছির মেলাতো আছেই।

উত্তরবঙ্গের স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) কৃষিতত্ব বিভাগের গবেষণা মাঠে এভাবেই আভা ছড়াচ্ছে সূর্যমুখী ফুলের হাসি। নয়ন জুড়ানো এই দৃশ্যে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকের এই গবেষণা মাঠে হাবিপ্রবির কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থী হাসিবুল হাসান খন্দকার স্মরণ মূলত সূর্যমুখী ফুলের উৎপাদন ও ফলনের উপর জৈব রাসায়নিক সারের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম সিকদারের তত্ত্বাবধানে গবেষণাটি করছেন।

হাসিবুল হাসান খন্দকার স্মরণ জানান, ‘বর্তমান সরকার ও কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূর্যমুখী চাষের ব্যাপারে অনেক বেশি আগ্রহ নিয়ে কাজ করছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমনকি বর্তমানে আমাদের দেশেও ভোজ্য তেল হিসেবে এই তেলের চাহিদা বেড়েছে। আমার মাস্টার্স এ ইচ্ছে ছিল কিছুটা ভিন্নরকম কাজ করার। যেহেতু সূর্যমুখী এখন আমাদের দেশের জন্য রাইজিং একটা ফসল তাই এটা নিয়ে কাজ করার আগ্রহটা বেড়ে গেছে। সর্বোপরি আমার সুপারভাইজার স্যারের পরামর্শে এটা নিয়ে কাজ করছি।’

সূর্যমুখী নিয়ে গবেষণার ব্যাপারে তিনি বলেন, আমার গবেষণার জন্য চাষকৃত সূর্যমুখীর জাত হলো বারি সূর্যমুখী-২। সূর্যমুখীর তেলের চাহিদা দিন দিন দেশ ও দেশের বাইরে বেড়েই চলছে। সূর্যমুখী নিয়ে গবেষণার মূল কারণ হলো আমাদের দেশে এই ফসলের চাষে যেন কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হয়।

সূর্যমুখী তেলের মধ্যে প্রোটিনের অনুপাত আমাদের দেশের অন্য সব ভোজ্য তেলের থেকে অনেক বেশি। আমাদের দেশে হৃদরোগী, উচ্চ রক্তচাপের রোগী, ডায়াবেটিস রোগী, কিডনি রোগীদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। বর্তমানে বাজারের ভোজ্য তেলগুলো শরীরের জন্য খুব খারাপ প্রভাব ফেলছে। যেখানে সূর্যমুখী তেল আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
তিনি জানান, সূর্যমুখী তেলের মধ্যে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ যেমন বেশি তেমনি এই তেলের রান্নাও সুস্বাদু। বাজারে এই তেলের চাহিদা যেভাবে বাড়ছে এই সময়ে আমাদের দেশের কৃষকরা এটি চাষ করলে অর্থনৈতিকভাবে অনেক উপকৃত হবে। মূলত এসব ভাবনাই এই ফসল নিয়ে গবেষণার কাজে আমাকে আগ্রহী করেছে।

তিনি বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি প্রথম এই ফসল নিয়ে কাজ করছি। আমি গত ২০২০ সালের ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ বীজ বপন করি। কৃষি গবেষণা মাঠটি সংস্কার করায় এবং উঁচু টিলা কেটে সেই মাটি গবেষণা মাঠে ফেলার কারণে গবেষণা মাঠটি চাষাবাদের জন্য অনুপযোগী ছিল। যার কারণে আমার বপনের পর বীজ গজাতে বিলম্ব হয়েছিল।
সে সময় আমাকে প্রতি সপ্তাহে ১ থেকে ২ বার করে সেচ দিতে হতো। এছাড়া মাটিতে অন্যান্য পুষ্টি উপাদান না থাকায় গাছের বৃদ্ধিও বিলম্ব হয়েছিল। পরে আমি গবেষণার বিষয় ঠিক রেখে যথেষ্ট পরিমাণে জৈব সার মাটিতে দিয়ে গাছগুলোর স্বাভাবিক বৃদ্ধি বজায় রাখার চেষ্টা করি।

কিন্তু ফুল আসার পর যখন ফুলগুলো ক্যাম্পাসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের ও বহিরাগত দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করতে থাকে তখনই বিপত্তি বাধে। অনেকেই ফুলগুলো দেখতে এবং ছবি তুলতে গিয়ে গাছ ও ফুল নষ্ট করে ফেলে। যার জন্য আমার গবেষণার মাঠে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে যেটা কোনো গবেষণার কাজে একদমে অনাকাঙ্ক্ষিত। যদিও এই ফসলের ফলে কৃষি গবেষণা মাঠটি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে, যেটা আমার জন্য খুবই আনন্দের।

বীজগুলো সুমিষ্ট হওয়ার জন্য পাখি অনেক গাছের অপরিপক্ব বীজ (ফল) খেয়ে ফেলেছিল। সর্বোপরি এই গবেষণার কাজটি করে আমার তেল জাতীয় ফসল উৎপাদনের বিভিন্ন বিষয়ে অনেক ভালো ধারণা হয়েছে, যেটা আমাকে ভবিষ্যতে অনেক বিষয়ে সাহায্য করবে।

বারি সূর্যমুখী-২ এর বীজের গুণগত মান নিয়ে হাসিবুল হাসান খন্দকার স্মরণ বলেন, অনেক পরিশ্রমের পর এখন আমি বীজগুলো সংগ্রহ করছি। বীজের গুণগত মান অনেক ভালো। আমার সুপারভাইজার স্যার আমার গবেষণার কাজে খুশি। প্রতিটি ফুলের ব্যাসার্ধ ১২-২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়েছে আর প্রতিটি ফুলে ৬৫০ থেকে ৯০০টা করে বীজ আসছে যার ওজন ৭০-৯৫ গ্রাম করে। এই হিসেবে ১ হাজার বীজের ওজন ৮০-১০৫ গ্রাম করে হচ্ছে।

কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম সিকদার বলেন, ‘সূর্যমুখী চাষ এখন বাংলাদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে তাই সূর্যমুখীতে রাসায়নিক সারের পাশাপাশি জৈব সারের প্রভাব নিয়ে কাজ করছি। এখানে তিন ধরনের জৈব সার (গোবর সার, প্রোল্টি লিটার ও ট্রাইকোডার্মা কম্পোস্ট) বিভিন্ন পরিমাণে ব্যাবহার করে পরীক্ষা করছি কোনটি ব্যাবহার করে বারি সূর্যমুখী-২ অধিক পরিমাণ ফলন দেয়। আমাদের গবেষণায় জৈব সারের প্রতি আমরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।

তিনি বলেন, গবেষণার উপযোগী পরিবেশ এখনও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সেভাবে গড়ে ওঠেনি। আমাদের গবেষণা কাজের জন্য সুযোগ সুবিধা অনেক কম। গবেষণা কাজের জন্য যে বরাদ্দ দেওয়া হয় তা অপ্রতুল। গবেষণার জন্য জমির পরিমাণও অনেক কম, যা আছে সেগুলোও সেভাবে রক্ষিত নয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য শিক্ষার্থীদের নতুন নতুন কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়ানোর প্রতি জোর দেন ড. শফিকুল ইসলাম সিকদার। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে অধিক পরিমাণে গবেষণার সুযোগ তৈরি ও বরাদ্দ বৃদ্ধির জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –