• বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ৮ ১৪৩১

  • || ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

কুবির আলোকিত সন্তানেরা

লালমনিরহাট বার্তা

প্রকাশিত: ২ ডিসেম্বর ২০১৮  

তখনও সূর্য ওঠেনি। দূর্বা ঘাসে শিশিরগুলো সোনালি ঝিলিকের অপেক্ষায় যখন- অপেক্ষায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও কিছু মানুষ। তারা আসবে এখানে, আসে বয়ে যায় আলোর বিস্ফোরণ। এটা শুরুর গল্প। 'কর্মে নিষ্ঠায় আমরা আলোর সন্তান' স্লোগান নিয়ে শুরু এই স্বেচ্ছাপ্রণোদিত শরীর চর্চা কর্মযজ্ঞ- সুপ্রভাত, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়!

দিনের শুরুর চিত্রটা এমন উষা। ছ'টার মতো বাজে। মৃদু ঠান্ডা। ঘুমের রাজ্যে বিভোর সবাই। তবে আলোর সন্তানেরা জেগে যায় সেই প্রত্যুষেই। দু-একজন করে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে জড়ো হন তারা।

ক্ষণিকের মধ্যে প্রাঙ্গণপূর্ণ সবার সামনে আসনে থাকেন সৌরভ স্যার। শুরু হয় শরীরচর্চা। হাত নাড়িয়ে, পিঠ উচিয়ে, পা বাড়িয়ে সে যে কতো ধরণের ব্যায়াম! মাঝে মাঝে গলা ছেড়ে হাক ডাক। শেষ আকর্ষণ-কালোজিরা, ছোলা খাওয়া এবং মধুপান। লক্ষ্য একটাই। সুস্থ থাকা। এ বিষয়ে অভিব্যক্তি জানতে কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ সোহরাব উদ্দীন এর সাথে। তিনিই পূর্বের বলা সৌরভ স্যার, এ শরীরচর্চা আয়োজনের প্রধান উদ্যোক্তা। কর্মনিষ্ট, স্বপ্নদ্রষ্টা, পরিশ্রমী ক্যাম্পাসের প্রকৃতই আলোর মানুষ তিনি।

 

1.কুবির আলোর সন্তানেরা

তিনি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলায় উৎসাহ দিয়ে থাকেন সবসময়। জানান সুপ্রভাত, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিবৃত্ত,কর্মকান্ড এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা। তিনি জানান, এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিক থেকে সংগঠনটির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। সকাল ৬ টা থেকে শুরু হয়ে শরীরচর্চা চলে পরবর্তী ৪৫ মিনিট পর্যন্ত।

সংগঠনটি হাল আমলের কমিটি গঠনে বিশ্বাসী নয়। শরীরচর্চায় অংশগ্রহণ করতে পারেন যে কেউ। সবধরণের ইতিবাচক বিশ্বাসই এর মূলমন্ত্র। মনসংযোগ শিক্ষা হিসেবে শরীরচর্চার একাংশ হচ্ছে ধ্যান করা। শুধু নিজেকে সুস্থ রাখা নয়, পুরো ক্যাম্পাসকে সুস্থ রাখতে এ সংগঠন তৎপর। এরই ধারাবাহিকতায় শহীদ মিনারের চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে বৃক্ষরোপণ করেছে আলোর সন্তানেরা।

 

2.কুবির আলোর সন্তানেরা

শিক্ষার্থীদের আহ্বান করে এ শিক্ষক বলেন, শিক্ষার্থীদের বিচরণ হবে পাঠে এবং মাঠে। পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলাই শিক্ষার্থীদের সৌন্দর্য।

তিনি আশাবাদী, ভবিষ্যতে দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়-ক্যাম্পাসের আদর্শ হবে কুবি'র এ সুপ্রভাত।

সংগঠনটির আরেক আলোকিত মানুষ বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাহিদা বেগম। সবাই চিনেন নাহিদা ম্যাম নামেই। ক্যাম্পাসের সকল ইতিবাচক কর্মপ্রবাহে যার উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা স্মরণযোগ্য। সুপ্রভাত সমন্ধে জানতে চাইলে তিনি বলেন-

প্রযুক্তি নির্ভর এ সময়ে আমরা কেমন করে যেন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছি, জনসম্পৃক্ততা, জনসংযোগ আমাদের কম, অতিদ্রুত অস্থির সময়প্রবাহ পার করতে গিয়ে আমাদের শরীর মন বিকল হয়ে পরছে, দিকে দিকে বাড়ছে আত্মহত্যার মত নেতিবাচক সমাজিক সংকট। আমরা এই সুপ্রভাতের প্ল্যাটফর্ম থেকে শারীরিক মানসিক অসুস্থতা নির্ণয় করে সুস্থতার চর্চা করে যাব নিরন্তর, ভোরের স্নিগ্ধ আলোয় পরিচ্ছন্ন করবো মন, আমরা প্রকৃতির কাছে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করবো, গাছ লাগাবো, শৈশবের মতই হাঁটবো, দৌঁড়োবো,খেলবো, সাইক্লিং করবো, গাছে চড়বো, সাঁতার শেখার পুকুর খুঁজবো। চড়ুইভাতির আনন্দে মাতিয়ে রাখবো সকালের ক্যাম্পাস। আমরা এভাবেই কর্মে নিষ্ঠায়, উচ্ছ্বাসে এক উজ্জ্বল আলোক-রশ্মি ছড়াতে চাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে, আমাদের লক্ষ্য সুস্থতার চর্চায় ক্যাম্পাসে অনিন্দ্য সৌন্দর্য!

 

3.কুবির আলোর সন্তানেরা

কথা হয় ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন এর সাথে। সদা হাসি-খুশি থাকা এ আলোর মানুষটি সুপ্রভাতের আরেকজন উদ্যোক্তা। সুপ্রভাত নিয়ে তিনি বলেন, এটি ভালো লাগার মন্দির। ভালো লাগার স্থান। সুপ্রভাতের জন্য আমাদের প্রত্যুষে ওঠা হয়। যে যার ধর্মের প্রার্থনা করার সুযোগও থাকে অনেক বেশি। নিঃসন্দেহে, সুপ্রভাত সকলের জন্য কল্যাণকর।

সুপ্রভাত নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও ভালো লাগার কমতি নেই। শুনতে চাই তাদের কথাও। ৭ম ব্যাচের এআইএস বিভাগের শিক্ষার্থী ওবায়দুল্লাহ বলেন, নিজেকে আগের চেয়ে বেশি সুস্থ মনে হচ্ছে। শারীরিক এবং মানসিক। ঘুম থেকেও ওঠা হয় সময়মতো, সকাল-সকাল।

বাংলা ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সিরাজুম মনিরা জানান, এখানে ধ্যান করার অনুভুতি সত্যিই অসাধারণ।

জুবায়ের, পড়েন অর্থনীতিতে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১তম ব্যাচের ছাত্র। তিনি বলেন, দিনের শুরুটা হয় সূর্য অবলোকনে, শিশির ছোয়ার স্পর্শে। এ এক অন্যরকম প্রকৃতির স্পর্শ।

একই ব্যাচের লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগ আকন্দ বলেন, সংগঠনের শুরু থেকে এখানে শরীরচর্চা করি। শুধু শরীরচর্চা নয়, শিক্ষকরা আমাদের দিক নির্দেশনা দেন জীবন গড়ার, সারাদিন উৎফুল্ল থাকার নিয়ামক এ শরীরচর্চা।

এ সংগঠনে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গণমাধ্যম উপদেষ্টা মাহবুবুল হক ভূঁইয়া, বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ মোকাদ্দেস-উল-ইসলামসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষকের অংশগ্রহণ দেখতে পাওয়া যায় ।

কুবি'র বন্ধনের জায়গা, ভালোবাসার জায়গা এ সুপ্রভাত। এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে সুদূরে। সৃষ্টি হবে হাজারো গল্প, কাহিনী, কবিতা। সুন্দর হতে থাকবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –