• বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ৮ ১৪৩১

  • || ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

বেতিয়ারা শহীদ দিবস আজ

লালমনিরহাট বার্তা

প্রকাশিত: ১১ নভেম্বর ২০১৮  

বেতিয়ারা স্মৃতিস্তম্ভ১১ নভেম্বর ঐতিহাসিক বেতিয়ারা শহীদ দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বেতিয়ারায় ‘বিশেষ গেরিলা বাহিনী’র ৯জন তরুণ গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

তারা হলেন- সদস্য মো. সিরাজুম মুনীর জাহাঙ্গীর, বশিরুল ইসলাম মাস্টার, নিজাম উদ্দিন আজাদ, শহীদুল্লাহ সাউদ, আওলাদ হোসেন, দুদু মিয়া, আবদুল কাইয়ুম, আবদুল কাদের ও মোহাম্মদ শফিউল্লাহ। ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি ও ছাত্র ইউনিয়নের উদ্যোগে এই বাহিনী গঠিত হয়েছিল।

বেতিয়ারা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি রক্ষা কমিটির সভাপতি জিয়াউল হক জিবু ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ জামাল উদ্দিনসহ স্থানীয় লোকজন জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে মনজুরুল আহসান খানসহ (বর্তমানে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির উপদেষ্টা) যৌথ গেরিলা বাহিনীর ৭৮ জন সদস্য ভারতের বিভিন্ন ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। দেশে ফিরে যুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য এসব গেরিলা যোদ্ধারা ভারতের বাইকোয়া বেইজ ক্যাম্প থেকে ১০নভেম্বর রাত ৮টায় চৌদ্দগ্রাম সীমান্তবর্তী ভৈরবনগর সাব-ক্যাম্পে (চৌত্তাখোলা ক্যাম্পের শাখা) পৌঁছেন। ভৈরবনগর সাব ক্যাম্পের দুই জন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের বিএসসি ও সামসুল আলম ১১ নভেম্বর রাতেই গেরিলা বাহিনীর ওই দলটির বাংলাদেশে প্রবেশের নকশা প্রণয়ন করেন। প্রণীত নকশা অনুযায়ী সাব ক্যাম্পের ৩৮জন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাকে দুই ভাগে বিভক্ত করে বেতিয়ারা চৌধুরী বাড়ির দু’পাশে অ্যামবুশ পাতা হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক শত্রুমুক্ত কিনা পরীক্ষা করার জন্য স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাদের ও আবদুল মন্নানকে ওই সড়কে পঠানো হয়।

৭৮জনের গেরিলা মুক্তিযোদ্ধার দলটি ছিল একাত্তরের ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমান্ডে গড়ে তোলা বিশেষ গেরিলা বাহিনীর দ্বিতীয় ব্যাচে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সদস্যদের একাংশ। ওই গেরিলা দলের কমান্ডার ছিলেন তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়ন নেতা সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। ওই দলটিকে দু’টি গ্রুপে বিভক্ত করে ওই দিন রাতে আগে-পরে ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম রোড’ পারাপারের সিদ্ধান্ত নেয়।

জগন্নাথ দিঘি ইউনিয়নের ‘বেতিয়ারা’ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রাংকরোডে (মহাসড়ক) পাক-বাহিনীর নজরদারি ছিল বেশি। চৌদ্দগ্রামের জগন্নাথ দিঘিতে তাদের একটি শক্তিশালী ক্যাম্পও ছিল। গেরিলাদের অত্যন্ত বিশ্বস্ত সোর্স আব্দুল কাদেরের পর্যবেক্ষণে সড়ক পারাপার নিরাপদ নিশ্চিত ভেবে শহীদ নিজাম উদ্দিন আজাদের নেতৃত্বাধীন ৩৮জন মুক্তিযোদ্ধার প্রথম দলটি বাক্সবন্দি ভারী আগ্নেয়াস্ত্রসহ ঢাকা-চট্টগ্রাম রোড অতিক্রমের জন্য এগিয়ে আসেন।

এ সময় সড়কের উত্তর পার্শ্বের গাছের আড়ালে স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পূর্ব পরিকল্পনানুযায়ী ওৎ পেতে থাকা পাক হানাদার বাহিনীর অ্যামবুশের মুখোমুখি হয়ে পড়েন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পাক হায়নাদের ব্রাশ ফায়ার চলতে থাকে। পাক হানাদারদের সঙ্গে সম্মুখ সমরে বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারেনি নিজামউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন দল। কারণ তাদের সঙ্গে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ থাকলেও গোলাবারুদগুলো ছিল বাক্সবন্দি। সোর্স’র সিগন্যাল ভুল থাকায় শত্রুদের পাতা ফাঁদে পড়ে ৭৮জনের মধ্যে শহীদ হন ৯জন, বাকি ৬৯জন সাহসী যোদ্ধা লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে প্রাণে বেঁচেছিলেন।

ডেইলি বাংলাদেশ/আরএ

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –