• রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

  • || ০৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘জনসেবায়’ বাংলাদেশ হতে পারে পাশ্চাত্যের অনুকরণীয়

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৩ জুলাই ২০২৪  

‘উদ্ভাবন’ এবং ‘সরকার’ শব্দ দুটি একসঙ্গে শুনলে অনেকেই চমকে ওঠেন। কারণ এই যুগেও বিশ্বব্যাপী এই দুটি ধারণা পরস্পর বিরোধী। তবে বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। সৃজনশীল উদ্ভাবনী ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে এ দেশের সরকার প্রভূত উন্নয়ন সাধন করেছে যার সুফল ভোগ করছে দেশের ১৭১ মিলিয়ন বা ১৭ কোটির বেশি জনগোষ্ঠী।

জনগণের সেবা কী করে করতে হয় তা বাংলাদেশের কাছ থেকে শিখতে পারে সারাবিশ্বের প্রশাসন।

উন্নত বিশ্বে জনগণের সেবার খাতগুলো আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দ্বারা আচ্ছন্ন। ইউরোপ-আমেরিকার অনেক দেশে এখনো মেইল ​​পরিষেবার দুরবস্থা বা জটিল শনাক্ত করণের আবেদন প্রক্রিয়ার জন্য হাসপাতালের অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়।

বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ হওয়া সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২৯ মিলিয়ন মানুষ ভোটার হতে পারেনি একটি বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্সের অভাবে এবং ৭ মিলিয়নের বেশি মানুষ সরকার-প্রদত্ত ফটো আইডেনটিফিকেশন ফর্ম সংগ্রহ করতে পারেনি। একইভাবে কোভিডের সময়, ব্রিটিশ ‘ট্র্যাক অ্যান্ড ট্রেস’ সিস্টেমের জন্য রাজ্য ৩৭ বিলিয়ন পাউন্ড খরচ করেও দ্বিতীয় লকডাউন এড়ানোর প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

সেদিক থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নের মডেল হিসেবে বিশ্ব দরবারে সমাদৃত হয়েছে। হেনরি কিসিঞ্জার ১৯৭১ সালে বংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলার পর বাংলাদেশ এখন নিজেকে রোল মডেল হিসেবে উপস্থাপন করেছে। কিসিঞ্জার আসলে ভাবতে পারেননি অর্ধশত বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিতে পরিণত হবে।

বাংলাদেশের দ্রুত গতি সম্পন্ন সেবাদান পদ্ধতি এই রূপান্তরে বড় অবদান রেখেছে। বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিসে বরাদ্দ কম থাকতে পারে, তবে বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে তারা প্রতিটি পয়সার মূল্য দিতে জানে।

সুইডেনের রাজকন্যা যখন বাংলাদেশ সফর করেন, তখন তিনি খুলনার কয়রায় স্মার্ট সার্ভিস পয়েন্ট পোস্ট অফিস পরিদর্শন করেছিলেন। সে সময় তিনি এই পোস্ট অফিসে একটি এমভিপিকে কাজ করতে দেখেন। পোস্ট অফিসগুলোকে স্মার্ট সার্ভিস পয়েন্টে (এসএসপি) পুনর্নির্মাণ করার মাধ্যমে, নাগরিকরা ভোটার নিবন্ধন, জমি রেজিস্ট্রি এবং শনাক্তকরণ নথির আবেদনসহ ৩২৫টিরও বেশি সরকারি ই-পরিষেবা গ্রহণ করতে পারছে।

স্মার্ট সার্ভিস পয়েন্ট (এসএসপি) উদ্যোগটি একটি পরীক্ষামূলক প্রোগ্রাম, যার খরচ মাত্র ৪৯০ মিলিয়ন টাকা (৪৪৬,৭০১ ডলার)। খুলনার স্কিমটি পরবর্তীতে সারাদেশে ৫০০টি বিভিন্ন পোস্ট অফিসে চালু করা হবে।

এই এসএসপিগুলো বাংলাদেশের জন্য দুটি সমস্যার সমাধান করবে। প্রথমটি, দেশের নিছক আকার ও দ্বিতীয়টি, ডিজিটাল সাক্ষরতা। জনসংখ্যার ৬৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ লোক গ্রামীণ এলাকায় বাস করে এবং মাত্র ৮ দশমিক ৭ শতাংশ লোকের নিজস্ব কম্পিউটার আছে। আগে একটি সরকারি কাগজ সংগ্রহ করতে অনেককে তাদের স্থানীয় সরকারি ভবনে প্রবেশ করতে অনেক মাইল পথ হাঁটতে হতো। একইভাবে অনেকেরই কাগজপত্রের সমাধান এবং ফাইল করার দক্ষতা এবং প্রযুক্তির অভাব ছিল।

বাংলাদেশে যে এই প্রথম বিদ্যমান সরকারি সেবা পুনর্গঠন করেছে তা নয়। কোভিড-এর সময় বাংলাদেশ ক্ষণিকের সিদ্ধান্তে দেশের সংসদ সম্প্রচারের চ্যানেলটিকে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি শিক্ষা প্রদানকারী চ্যানেলে পরিণত করেছে। লকডাউন ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জাতীয় টিভিতে পাঠ প্রদানের মাধ্যমে, বাংলাদেশের শিশুদের এক দিনের বেশি শিক্ষা ছাড়া থাকতে হয়নি।

বাংলাদেশ দেখিয়ে দিয়েছে শুধু অর্থ দিয়ে সুশাসন হয় না। বরং উদ্ভাবন, মিতব্যয়িতা ও কর্মতৎপরতার মাধ্যমে নাগরিকদের জন্য সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা যায়।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –