• সোমবার ০১ জুলাই ২০২৪ ||

  • আষাঢ় ১৬ ১৪৩১

  • || ২৩ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৫

যেভাবে পাহাড়ে লুকিয়ে ছিলেন এমপি আনার হত্যার দুই আসামি

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৭ জুন ২০২৪  

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার ঘটনার অন্যতম আসামি ফয়সাল ও মোস্তাফিজ হিন্দু পরিচয়ে ২৩ দিন খাগড়াছড়ির পাতাল কালীমন্দিরে লুকিয়ে ছিলেন। খবর পেয়ে সেখান থেকে তাদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। 

আনার হত্যার ঘটনায় মাস্টারমাইন্ড শিমুল ভুঁইয়ার পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে জড়িত ছিল ফয়সাল ভুঁইয়া ও মোস্তাফিজুর রহমান। ১৯ তারিখ তারা দেশে ফেরে। শিমুল ভুঁইয়ার কাছ থেকে পায় মাত্র ৩০ হাজার টাকা। সেই টাকা নিয়ে সীতাকুণ্ড পাতাল কালীমন্দিরে আত্মগোপনে চলে যায় তারা। সেখানে তারা হিন্দু পরিচয়ে আশ্রয় নিয়ে ২৩ দিন অবস্থান করে।

বুধবার ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ সেখানে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে তাদের ঢাকায় আনা হয়।

তাদের বহন করা হেলিকপ্টারটি বিকেলে পূর্বাচলে ১৮ নম্বর সেক্টরে বঙ্গবন্ধু ট্রাই-টাওয়ারের জমিতে অবতরণের পর সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেন, আমরা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার ঘটনার তদন্ত করছিলাম। গতকাল শুনলাম তারা খাগড়াছড়ি বা সীতাকুন্ড পাহাড়ের দিকে অবস্থান করছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের টিম গতকাল সেখানে সাঁড়াশি অভিযানে যায়। এরপর আজ সকালে আমরা আরেকটি টিম সেখানে যায়। অনেক উঁচু পাহাড়, সেখানে যাওয়া অনেক কঠিন। হেঁটে পৌঁছাতে ৭/৮ ঘণ্টা লাগে। পরে সেখান থেকে মোস্ট ওয়ানটেড দুজনকে গ্রেফতার করা হয়।

তিনি বলেন, যে রুমটিতে সংসদ সদস্য আনারকে হত্যা করা হয়েছে, সেখানে ছিল ফয়সাল ভুঁইয়া। যিনি হত্যার আগে ক্লোরোফম দিয়ে অজ্ঞান করেছিল আনারকে। আর মোস্তাফিজুর রহমান আনারকে চেয়ারে বেঁধে বিবস্ত্র করেছিল, একই সঙ্গে মৃত্যু নিশ্চিত করেছিল। এরপর তাকে বাথরুমে নেয়া হয়েছিল। সেখানে মূল মাস্টারমাইন্ড শিমুল ভুঁইয়ার সহযোগী হিসেবে ছিল গ্রেফতার জিহাদ, আর আজকে গ্রেফতার ফয়সাল ভুঁইয়া, মোস্তাফিজুর রহমান।

হারুন দাবি করেন, এই দুজন গ্রেফতার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু আমাদের কাছে স্বীকার করেছেন। এরপরও আমরা দুজনকে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করবো। তারপর তাদের ভূমিকা সম্পর্কে বিস্তারিত বলা যাবে।

খাগড়াছড়ি তো গহীন অঞ্চল, সেখানে তারা কাদের আশ্রয়ে ছিল- জানতে চাইলে হারুন বলেন, সীতাকুন্ড পাহাড়ের নিচে পাতাল কালীমন্দির আছে। সেখানে তারা নিজেদের নাম বদলে ফেলেন। ফয়সাল পলাশ রায় আর মোস্তাফিজুর শিমুল রায় নাম ধারণ করে হিন্দু সেজে মন্দিরে অবস্থান করেন। বলেন, মাকে তারা খুব ভালোবাসেন। কালীমন্দির ছাড়া থাকতে পারি না। এভাবে তারা ছদ্মবেশ ধারণ করে সেখানে ২৩ দিন অবস্থান করেন।

হারুন বলেন, তারা ইন্ডিয়াতে হত্যার কাজ শেষ করে ১৯ তারিখ দেশে ফেরেন। তারা শামীমের সঙ্গে কথা বলেন। দুজনকে মাত্র ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এই টাকা নিয়ে তারা খাগড়াছড়িতে চলে যায়। যেহেতু তারা আগে ট্রাক চালাতেন সেজন্য তারা সীতাকুণ্ডের গহীন এলাকা চিনতেন। নিরাপদ ভেবে বাঁচার জন্য সেখানে অবস্থান নেন। হিন্দু নাম ধারণ করে আত্মগোপন করেন। বাঁচার জন্য তারা আরো নানান জায়গায় যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেছে।

তিনি বলেন, বহুদিন ধরে তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছিল। কখনো খবর পেতাম সুন্দরবনে, কখনো সমুদ্রে, কখনো গহীন বনে আছে। আমি বলেছিলাম, তারা যেখানেই থাকুক, পাহাড়ে থাকুক আর সমুদ্রে থাকুক তাদের ধরে আনবো। আজকে তাদের ধরেছি। সংসদ সদস্য আনারকে হত্যায় যে সাতজন অংশ নিয়েছিল তার মধ্যে এই দুজন ছিল শিমুল ভুঁইয়ার পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় ব্যক্তি। আজকে এই দুজনকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে কিলিং মিশনে যে সাতজন অংশ নিয়েছিল তারা সবাই গ্রেফতার হলো। এর বাইরে বাকি যারা মাস্টারমাইন্ড হিসেবে কাজ করেছে, অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করেছে, বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছে আমরা মনে করি এসব ব্যক্তিকে এখন গ্রেফতার করতে হবে। আমরা এরই মধ্যে শিমুল ভুঁইয়ার ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দির ভিত্তিতে মিন্টু ও গ্যাস বাবুকে গ্রেফতার করেছি। বাংলাদেশের কাছে সাতজন গ্রেফতার ও ইন্ডিয়াতে আছে সিয়াম ও জিহাদ।

এক প্রশ্নের জবাবে হারুন বলেন, ডিবি পুলিশ শিমুল ভুঁইয়া, শিলাস্তি ও তানভীরকে যখন প্রথম গ্রেফতার করে তখন কিন্তু ইন্ডিয়ান পুলিশ এসে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। আমরাও কিন্তু টিম নিয়ে তাদের হাতে গ্রেফতার জিহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এরপর যখন জানলাম সিয়াম নেপালে তা তাদের জানিয়েছি। নেপালে গেছি, সিয়ামকে গ্রেফতারে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করেছি।

তিনি বলেন, আনার হত্যার আরেক মাস্টারমাইন্ড যিনি আমেরিকা পালিয়েছেন। তাকে গ্রেফতারে আমরা আমেরিকা দূতাবাসে কথা বলেছি। দেখা করে গ্রেফতারের অনুরোধ করেছি। ইন্টারপোলের সহযোগিতা চেয়েছি। ইন্ডিয়ার কাছে কিন্তু সে মোস্ট ওয়ানটেড। তাদের সঙ্গে আমেরিকার চুক্তি আছে। তারাও চেষ্টা করছে, আমরাও চেষ্টা করছি।

মাস্টারমাইন্ডদের গ্রেফতারের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হারুন বলেন, আজকে গ্রেফতার দুজনসহ আগে গ্রেফতার সবাইকে আবারো জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সবকিছু মিলে যদি আরো কেউ থাকে যারা সাহায্য-সহযোগিতা করেছে, অর্থ দিয়েছে, প্ল্যান করেছে, তাদের যদি নাম পাই, তথ্য-উপাত্ত পাই, পারিপার্শ্বিক প্রমাণ পাই, তাহলে তাদেরও গ্রেফতার করা হবে।

রাজনৈতিক প্রভাব বা বাধা চাপ আছে কি না- জানতে চাইলে হারুন বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডিএমপি কমিশনার একাধিকবার বলেছেন কোনো চাপ নেই। যদি আমাদের উপরে চাপ থাকতো তাহলে এতো অ্যাচিভমেন্ট করতে পারতাম না। আমরা কিন্তু একজনের পর একজন আসামি গ্রেফতার করেছি। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি তাকেই গ্রেফতার করেছি। যারা সরাসরি ক্লিন মিশনে জড়িত সুস্পষ্ট প্রমাণ আছে, আমরা শুধু তাদেরকেই আইনে আওতায় নিয়ে আসছি। আমরা অনর্থক কোনো দিকে দাপাদাপি করছি না, নির্দোষ কাউকে হয়রানি করছি না। আমি মনে করি যিনি দোষী তাকে কেউ ছাড়াতে পারবে না।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –