• বৃহস্পতিবার ২৭ জুন ২০২৪ ||

  • আষাঢ় ১২ ১৪৩১

  • || ১৯ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৫

দেশজুড়ে বইছে ঈদ আনন্দ

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৭ জুন ২০২৪  

দেশজুড়ে বইছে ঈদ আনন্দ                                                     
মহান আল্লাহর অপার অনুগ্রহ লাভের আশায় সারাদেশে উদযাপিত হচ্ছে মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি করছেন। সোমবার (১৭ জুন) সকালে ঈদের নামাজ শেষেই পশু কোরবানিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন মুসলমানরা। দেশজুড়ে পাড়া-মহল্লার অলিগলিতেই পশু কোরবানির দৃশ্য চোখে পড়ে।


জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত
জাতীয় ঈদগাহ মাঠে সকাল সাড়ে ৭টায় ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঈদের প্রধান জামাতে অংশ নিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, মন্ত্রীপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা।

এছাড়াও জাতীয় ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করেন রাজনৈতিক নেতা, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকসহ নানান শ্রেণিপেশার ও বয়সের মুসল্লিরা।

রাজধানীতে ঈদ আয়োজন 
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও বাসার নিচের গ্যারেজে, কোথাও বাসার সামনের রাস্তায়, আবার কোথাও এলাকার ফাঁকা মাঠের মধ্যে পশু কোরবানি চলছে।

এদিকে, চুক্তিতে পশুর মাংস কাটতে আসা কসাইরাও ব্যস্ত সময় পার করছেন। একটার পর একটা পশুর চামড়া ছাড়িয়ে মাংস প্রস্তুত করে দিচ্ছেন তারা।

চট্টগ্রামে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত, চলছে পশু কোরবানি
চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (১৭ জুলাই) সকাল সাড়ে ৭টায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) তত্ত্বাবধানে জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ মসজিদে প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়। একই মসজিদে সোয়া ৮টায় দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবার নামাজ শেষে খুতবা দেওয়া হয়। খুতবা শেষে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে দোয়া করা হয়। 

মসজিদটিতে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এবং বিএনপি নেতা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন নামাজ আদায় করেন।

নামাজ শেষে ফিলিস্তিনিদের জন্য বিশেষ দোয়া
আল্লাহর উদ্দেশে পশু কোরবানির আগে মসজিদ ও ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঈদুল আজহার নামাজ। নামাজের আগে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় ধর্মীয় বিধিবিধান, নিয়ম মেনে কোরবানি করা, অসহায়দের মাঝে কোরবানির গোশত বিতরণের বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করেন ইমামরা। নামাজ শেষে সব জায়গায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়। দেশজুড়ে ফিলিস্তিনের নির্যাতিত মুসলমানদের নিয়ে প্রার্থনা করা হয়েছে। পাশাপাশি দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।


সিলেটে জলমগ্ন ঈদ, বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
ভারি বৃষ্টিতে সিলেট নগরে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে নগরের বেশির ভাগ এলাকা। ঈদের সকালে এমন পরিস্থিতি দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী।

জলাবদ্ধতার কারণে নগরের অনেক ঈদগায়ের ঈদের জামাত পেছানো হয়েছে। বাসা বাড়ি ও সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কোরবানি দেয়া নিয়েও দুশ্চিন্তায় স্থানীয়রা।

এদিকে পাহাড়ি ঢলে নগরের বাইরে উপজেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বিশেষত সুনামগঞ্জ শহরে ঢুকে পড়েছে বন্যার পানি।


আজও চলছে ছাগল বিক্রি
কোরবানির ঈদে গরুর পাশাপাশি ছাগলের চাহিদা মোটেই কম নয়। অনেকেই গরুর পাশাপাশি ছাগল কোরবানি দিয়ে থাকেন। অনেকে আবার বড় পশু কোরবানি না দিয়ে একাধিক ছাগল কোরবানি দেন। রাজধানীতে সোমবার (১৭ জুন) ঈদ চলাকালেও ছাগল ক্রয়-বিক্রয়ের দৃশ্য চোখে কেড়েছে। ছাগল বিক্রেতাদের বেশিরভাগই ফেরি করে ছাগল বিক্রি করছেন। কয়েকজন মিলে দলবেঁধে কোনো গলির সামনে দাঁড়াচ্ছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে হাজির ক্রেতারা। দরদাম করে কিনে নিয়ে যাচ্ছে পছন্দের ছাগল। 


আছে কষাই সংকট
কোরবানির জন্য পছন্দের পশুকে জবাইয়ের জন্য কসাই মিলছে না। দু-একজন মৌসুমি কসাই মিললেও তারা পারিশ্রমিক হাঁকাচ্ছেন আকাশচুম্বী। কসাই নিয়ে এমন ভয়াবহ বিড়ম্বনায় রাজধানীবাসী। তাই কেউ কেউ নিজেদের মতো করেই মাংস কাটছেন।

কসাই খোঁজা নিয়ে এই ভোগান্তির বিষয়ে অনেকেই বলছেন, কোরবানির দিন প্রকৃত কসাই কখনোই পাওয়া যায় না। দুই-একজনের দেখা মিললেও অনেক বেশি টাকা দিতে হয় তাদের। কমবেশি প্রতিবছরই রাজধানীতে কোরবানির সময় দেখা দেয় এই বিড়ম্বনা।

এদিক, এই সুযোগে বাড়তি আয়ের আশায় মাঠে নেমে পড়ে মৌসুমি কসাইরা। এসব মৌসুমি কসাইদের কাটাকাটির অভিজ্ঞতা না থাকলেও নগরবাসীর ভরসা তারাই। বিভিন্ন জেলা থেকে অনেকেই ঈদের আগের রাতে ঢাকায় আসে কসাইয়ের কাজ করতে। তবে অনেকে সেসব না পেয়ে নিজেরাই পশু কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এরই মধ্যে ছুরি-চাপাতিসহ আনুষঙ্গিক বিভিন্ন জিনিসপত্র কেনাও শুরু করে দিয়েছেন অনেকে।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সচেতন প্রশাসন
যথাযথ ব্যবস্থাপনা ও সচেতনতার অভাবে কোরবানির পশুর রক্ত ও নানা উচ্ছিষ্ট থেকে মারাত্মক পরিবেশ দূষণের সম্ভাবনা রয়ে যায়। আর বর্জ্য বিভিন্ন রোগবালাই ছড়ায়। তাই কোরবানির পশুর বর্জ্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ, পশু জবাইয়ের স্থান পরিষ্কার করার জন্য দেশের সব সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ কাজ করে যাচ্ছেন। সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় সরকার প্রশাসন। এ বিষয়ে আগে থেকেই প্রতি জেলার জেলা প্রশাসক, পৌর মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের নিয়ে সভা করে পরিকল্পনাও করা হয়েছে।


ঈদে বাড়তি সচেতনতা ট্র্যাফিক বিভাগ
ঈদ উপলক্ষে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্র্যাফিক বিভাগ থেকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। বিষয়গুলো মেনে চলার জন্য নগরবাসীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে ডিএমপি। গরু কোরবানির সময় সড়ক-মহাসড়কে ট্র্যাফিক ম্যানেজমেন্ট যেন ব্যাহত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করা হয়েছে। ঈদ ঘিরে বাড়তি সচেতনতায় রয়েছে ট্র্যাফিক বিভাগ।


চামড়া নিয়ে দর-কষাকষি
সারা বছরের পশুর চামড়ার মোট সংগ্রহের ৫০ শতাংশ আসে কোরবানির ঈদ থেকে। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, এ বছর সোয়া কোটি পিস পশুর চামড়া সংগ্রহ হবে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে দেশে কোরবানি দেওয়ার মতো ১ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭ পশু প্রস্তুত আছে। যার মধ্যে গরু ৫২ লাখ। এসব চামড়া সংগ্রহ করবে ট্যানারি মালিকরা। এরই মধ্যে ট্যানারি মালিকদের মনোনীত প্রতিনিধি, বিভিন্ন এলাকার মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া সংগ্রহ ও প্রক্রিয়ার কাজে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। সকাল থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় চামড়া নিয়ে দরকষাকষির দৃশ্য চোখে পড়েছে। 

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –