• শুক্রবার ২৫ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ৮ ১৪৩১

  • || ২০ রবিউস সানি ১৪৪৬

বাল্যবিয়ে দেয়ায় শরীরে আগুন দিয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীর আত্মহত্যা 

লালমনিরহাট বার্তা

প্রকাশিত: ৫ ডিসেম্বর ২০১৮  

দালাল ঘটকের পাল্লায় পড়ে এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থীনী মাজেদাকে (১৪) বাল্য বিয়ে  দিয়ে বিপাকে পড়েছে পরিবারের অভিভাবকরা। মেয়েটির মতামত উপক্ষো করে তার অল্প বয়সে জোরপূর্বক বিয়ে দেওয়ায় নিজের শরীরে কেরোসিড় ঢেলে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা চেষ্টা করে সে। নীলফামারী সদর উপজেলার পলাশবাড়ী ইউনিয়নের তরনীবাড়ী মাদ্রাসাপাড়া গ্রামে এ ঘটনায় মাজেদাকে জরুরী ভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে নিয়ে ভর্তি করা হয়েছে। তার শরীরের ৪২ ভাগ ঝলসে গেছে।

সেএখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। এ ঘটনার পর পালিয়ে গেছে দালাল ঘটক ও বরপক্ষের পরিবার। দিন মজুরের এই মেয়েটির চিকিৎসার ভাড় নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডাঃ আবুল কামাল আজাদ। মাজেদা আক্তার উক্ত এলাকার দিনমজুর মজিবর রহমানের মেয়ে। সে তরনীবাড়ী দাখিল মাদ্রাসার ছাত্রী এবং এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী।

অভিযোগ মতে এলাকার দালাল ঘটক আমজাদ হোসেন, মাজেদার বাবাকে বিনা যৌতুকে মেয়ের বিয়ে দেয়ার প্রলোভন দিয়ে ২৯ নবেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে জোড় করে মেয়ে মাজেদাকে নিয়ে আসে একই ইউনিয়নের পটুয়াপাড়া গ্রামে। এই গ্রামের আব্দুল হানিফের বাড়িতে হানিফের ছেলে আব্দুল আলিমের সঙ্গে জোড়পূর্বক বিয়ে দিয়ে স্বামীর বাড়িতে মাজেদাকে রেখে চলে যায় তারা। বিয়ের তিন দিন পর সোমবার (৩ ডিসেম্বর) বেলা ১২টায় মাজেদা তার বাবা বাড়িতে যায়।

ওইদিন দুপুর দুইটার দিকে মাজেদা বাড়ির রান্না ঘরে কেরসিন ঢেলে নিজ শরীরে আগুন লাগিয়ে দেয়। পরিবারের লোকজন সহ এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে প্রথমে নীলফামারী সদর আধুনিক হাসাপাতালে নিয়ে এলে তাকে দ্রুত স্থানান্তরিত করা হয় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। রংপুর হতে মাজেদাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে স্থানান্তরিত করার জন্য বলা হয়। কিন্তু দিনমজুর বাবার আর্থিক অবস্থা ভাল না থাকায় তিনি মেয়েকে ওই দিন রাতে পুনরায় নীলফামারীর গ্রামে ফিরে নিয়ে আসে। খবর পেয়ে রাতেই পলাশবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মমতাজুল হক প্রামানিক নীলফামারী থানা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে মাজেদাদের বাড়ি যায়।

মাজেদা পরিস্থিতি খারাপ দেখতে পেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ও পুলিশের আর্থিক সহায়তায় মাজেদাকে ওই দিন মধ্য রাতে এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে পাঠানো হয় ঢাকায়। বুধবার ইউপি চেয়ারম্যান জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদের বাড়ি নীলফামারীতে হওয়ায় তাকে আমি ফোন করে বিস্তারিত ঘটনা জানাই। তার সহায়তায় মাজেদাকে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। সেখানে সে চতুর্থ তলার ১৪ নম্বর বিছানায় চিকিৎসাধীন রয়েছে। মাজেদার শরীরের ৪২ ভাগ দ্বগ্ধহয়েছে। তার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ। এদিকে মাজেদা রান্না করতে গিয়ে আগুনে পুড়ে গেছে বলে দাবি তার বাবার বাড়ির লোকজনের। এলাকাবাসীর অভিযোগ, অল্প বয়সে জোরপূর্বক বিয়ে দেওয়ার কারণে মাজেদা নিজের শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা চেষ্টা করেছে।

এ ঘটনার পর মাজেদা স্বামী ও দালাল ঘটক পালিয়ে গেছে। নীলফামারী সদর থানার ওসি মোমিনুল ইসলাম জানান, বিষয়টি আমরা মনিটরিং করছি। মেয়েটি জোড়পূর্বক তাকে বিয়ে দেয়ার কারনে শরীরে আগুন দিয়েছে বলে মৌখিক অভিযোগ করে গেছে। বিষয়টি তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –